দিনে দিনে ভয়াবহ থেকে ভয়াবহতর হয়ে উঠছে রাজ্যের করোনা (Corona) পরিস্থিতি। তার মধ্যে আবার রাজ্যে চলছে নির্বাচন। তাই সভা মিটিং মিছিল থেকে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঠেকিয়ে কীভাবে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায় তার জন্য প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশনও। অন্যদিকে আবার পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে আগামী দফাগুলিতে আর কোনও বড় সভা করা হবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন বামেরা (Left Front)। পাশাপাশি কংগ্রেস (Congress) নেতা রাহুল গান্ধীও (Rahul Gandhi) বাংলায় তাঁর সমস্ত সভা স্থগিত করেছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কী ভাবছে তৃণমূল (TMC) ও বিজেপি (BJP)?
এই প্রসঙ্গে আজতক বাংলাকে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) জানান, 'তৃণমূল তো বলেছিল ৩ দফার ভোট একেবারে হয়ে যাক। তৃণমূল তো চাইছে ব্যাপারটাকে কমিয়ে আনতে। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি সমস্ত কাজকর্ম ছেড়ে প্রতিদিন এখানে এসে সভা করতে শুরু করেন তাহলে তৃণমূল কী করবে? আর বামেদের সভায় লোক হচ্ছে না, তাই তারা বন্ধ করতে পারলে বাঁচে। আর রাহুল গান্ধী এলেন কী না এলেন তাতে পশ্চিমবঙ্গের কিছু যায় আসে না। রাহুল গান্ধী কী বললেন না বললেন সেটা অপ্রাসঙ্গিক।' কুণালবাবু আরও বলেন,'প্রধানমন্ত্রী আসবেন, বড় বড় সভা করবেন, আর তৃণমূল বাড়িতে বসে হরিনাম সংকীর্তন করবে, এটা কোনও কথা? এটা হয় নাকি? করলে সবাই বন্ধ করুক।' একইসঙ্গে সন্ধ্যে ৭টার পরে ও সকাল ১০টা আগে প্রচার না করার যে নির্দেশ কমিশন দিয়েছে তার উদ্দেশ্যে নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন কুণাল ঘোষ।
অন্যদিকে এই একই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু (Sayantan Basu) বলেন,'বামেদের সভায় ২৫-৩০ জনের বেশি লোক হয় না। আর রাহুল গান্ধীর সভায় মাঠ ভরানো তো দূরের কথা, ধারে কাছেও লোকজন থাকেন না। তাই তাঁরা সভা করলেও যা, না করলেও তাই। বাম কংগ্রেসকে নিশানা করে সায়ন্তনের আরও কটাক্ষ, তারা যে জণগনের কথা ভেবে সভা করছেন না তা নয়, আসলে তাদের একটা অজুহাত দরকার ছিল নির্বাচনী যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যাওয়ার, তাই তারা পালিয়ে গিয়েছে।' একইসঙ্গে বিজেপির এই মুহূর্তে বড় সভা বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা নেই বলেও জানিয়ে দেন সায়ন্তন। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, 'কমিশন যে গাইডলাইন দিয়েছে সেভাবেই সভা ও রোড শো করা হবে। যদি তারা বন্ধ করতে বলে তখন করা হবে।'
এদিকে তৃণমূল ও বিজেপির এই অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছে বাম - কংগ্রেস। এই প্রসঙ্গে সিপিআইএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য (Ashok Bhattacharya) জানান, 'কাউকে খুশি করার জন্য নয়, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছ। সেই কারণেই করোনার সময়ে বড় কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি করছি না। আর আমাদের ক্ষমতা আছে কি না সেটা তো ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডে দেখিয়ে দিয়েছি।' এক্ষেত্রে মানুষ মারা গেলেও তৃণমূল ও বিজেপির কিছু যায় আসে না, বরং তাদের কাছে ভোটটাই আগে বলেও মন্তব্য করেন অশোকবাবু।
পাশাপাশি কার্যত একই ভাবে তৃণমূল ও বিজেপিকে নিশানা করেন কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নানও (Abdul Mannan)। তিনি বলেন, 'ওদের কাছে মানুষের জীবনের দাম নেই। তাই ওরা এমন কথা বলতে পারে। আমাদের কাছে মানুষের জীবনের দাম সবচেয়ে বেশি, তাই আমরা গুরুত্ব দিই। আমরা ও বামপন্থীরা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলি না। আমাদের সঙ্গে ওদের আদর্শগত তফাৎ আছে। মানুষ বিচার করবেন কোনটা ঠিক।'