গত ২৭ নভেম্বর দীর্ঘ লড়াইয়ের সঙ্গী শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিতেই মেদিনীপুরে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তাই পশ্চিম মেদিনীপুরের এই সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলনেত্রী কী বার্তা দেন সেদিকেই তাকিয়ে ছিল রাজনৈতিক মহল। তারমধ্যে সভামঞ্চে অধিকারী পরিবারের অনুপস্থিতি নতুন মাত্রা যোগ করেছিল সভা শুরুর আগেই। তবে শুভেন্দু অধিকারী বা অধিকারী পরিবারকে নিয়ে একটি কথাও খরচ করলেন না তৃণমূলনেত্রী। যদিও প্রকাশ্যে নাম না নিলেও ইঙ্গিতে দলবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত দলীয় কর্মীদের মেদিনীপুরের সভামঞ্চ থেকেই কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গতমাসে বাঁকুড়ার জনসভা থেকে একযোগে কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূলকে নিশানা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। সেই চেনা ছকে আক্রমণ এদিনও শানাতে দেখা গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বহিরাগত ইস্যুতে ফের কামান দেগেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে। বিজেপি ভোটের আগে এরাজ্যে একের পর একে কেন্দ্রীয় নেতাকে পাঠানোয় প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলেন মমতা। এদিনও তৃণমূলনেত্রী দাবি করেন বহিরাগতদের দিয়ে বাংলা দখল করতে পারবে না বিজেপি। নিজের জেলে যাওয়া নিয়েও মন্তব্য করেন মমতা। ফের একবার বলেন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জেলে যেতে হলে ২০২১-এর ভোটে সেখান থেকেই জেতাবেন দলকে। কিন্তু এই ধরণের কথা তো তৃণমূলনেত্রীর মুখে আগেও শুনেছে আমজনতা। পশ্চিম মেদিনীপুরের সভা থেকে তিনি দলবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্তদের কী বার্তা দেন তাই নিয়েই ছিল জোর আলোচনা। হতাশ করেননি তৃণমূলনেত্রী। কারও নাম না নিয়েই চাঁচাছোলা ভাষায় সেই বার্তাও দিতে দেখা গেছে তৃণমূলনেত্রীকে।
গত ২২ বছর ধরে নিজে হাতে যে দলকে সাজিয়ে তুলেছেন তৃণমূলনেত্রী সেই তৃণমূলেই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভাঙনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। একাধিক নেতা-মন্ত্রীর সুর বদলাচ্ছে। এই আবহেই মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে মমতা বলেন, আমরা দুর্বল নই, নির্বাচনের আগে ব্ল্যাকমেইল করে বিজেপির বন্ধুরা তৃণমূলকে জব্দ করতে পারবে না। সরাসরি কারও নাম না নিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় যে রয়েছেন বিক্ষুব্ধরা তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। এই প্রসঙ্গেই তৃণমূলনেত্রী উল্লেখ করেন, ১৯৯৮ সালে সদ্য জন্ম নেওয়া তৃণমূল কোন সংগঠন ছাড়াই কাঁথি এলাকায় ভোটে লড়ে ভাল ফল করেছিল। দলীয় প্রার্থী অখিল গিরি হেরে গেলেও দাগ কেটেছিল তৃণমূল।
এখানেই থামেননি তৃণমূলনেত্রী। সভার একেবারে শেষলগ্নে মমতা বলেন, চোরেরা চুরির টাকা সংরক্ষণের জন্যই বিজেপিতে যাচ্ছে। বস্তুত গত কয়েকদিন ধরেই ঘাসফুল শিবিরের একাধিক নেতার শিবির বদলের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যাদের মধ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। যদিও মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও এখনও দলত্যাগ করেননি। নিজের রাজনৈতিক অবস্থানও স্পষ্ট করেননি নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তাই তাঁকে নিয়ে ক্রমেই বেড়ে চলেছে গুঞ্জন। এই আবহে অধিকারী পরিবারের গঢ় পূর্ব মেদিনীপুরের প্রতিবেশী জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
গত শুক্রবারই দলের বৈঠকে মমতা বলেছিলেন নন্দীগ্রাম-হলদিয়া ও কাঁথিতে দলবিরোধী কাজ চলছে। এ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন নেত্রী। এরপরেই গত শনিবার ৪ শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ নেতাকে অপসারিত করে তৃণমূল। তারপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সভা নিয়ে তাই তৈরি হয়েছিল নতুন জল্পনা। যদিও সরাসরি কারও নাম নিলেন না তৃণমূল নেত্রী। তবে মেদিনীপুরের মাটি থেকেই দল বিরোধীদের জনসমক্ষে কড়া বার্তা দিয়ে রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।