মন্ত্রিত্ব আগেই ছেড়েছেন। দলের সঙ্গে দিনে দিনে বাড়ছে দূরত্বও। এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারীর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে চলেছে সেই দিকেই তাকিয়ে রাজ্য রাজনীতি। নিজে অবশ্য ধোঁয়াশা এখনও জিইয়ে রেখেছেন নন্দীগ্রামের বেতাজ বাদশা। এরমধ্যেই ফরে মেদিনীপুর ছেড়ে কলকাতায় নন্দীগ্রামের বিধায়ক। শোনা যাচ্ছে এদিনই তিনি বিধায়ক পদ ছাড়ার মত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন।
গত ৭ ডিসেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুর জনসভা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। সেদিনীর জনসভা প্রতিবেশী পূর্ব মেদিনীপুরের সব সাংসদ-বিধায়কদের হাজির থাকতে বলা হলেও অনুপস্থিত ছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সভায় গরহাজির ছিলেন অধিকারী পরিবারের আর দুই সদস্য তথা তৃণমূল সাংসদ শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারী। তা নিয়ে জলঘোলাও কম হয়নি। মেদিনীপুরের সভা থেকে নাম না করেই শুভেন্দুকে সেদিন বার্তা দিয়ে ছিলেন নেত্রী। তবে তাতে পরোয়া না করে উল্টে মমতার জনসভা চলাকালীন কলকাতায় এসেছিলেন শুভেন্দু। তখনই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল এবার কী তবে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর বিধায়কপদ ছাড়তেই তিলোত্তমায় তিনি। তবে সেই জল্পনার কোনও উত্তর না দিয়েই ফের মেদিনীপুরে ফিরে যান শুভেন্দু। ফের একবার রহস্য বাড়িয়ে কলকাতায় এসেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। সূত্রের খবর, এদিনই চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন শুভেন্দু। ইতি টানতে পারেন নিজের বিধায়ক পদের।
শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা তুঙ্গে রয়েছে। দলের সাথে তাঁর যে দূরত্ব বাড়ছে , তা উভয় তরফ থেকেই বেশ কিছুদিন ধরে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছিল। গত কয়েকদিনে দলের ব্যানারের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জনসংযোগ চালিয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু। ‘ইঙ্গিতবাহী’ মন্তব্য করে তাঁর দল ছাড়ার জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছেন। আর এই আবহেই গত মাসের শেষে মন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে সেই জল্পনাকে আরও তুঙ্গে তুলে দিয়েছেন। তৃণমূল সরকারের মন্ত্রিসভায় রাজ্য পরিবহণ, সেচ এবং জলসম্পদ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু ৷ সবকটি দফতর থেকেই পদত্যাগ করেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তার আগেই হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন-এর চেয়ারম্যান পদ থেকেও পদত্যাগ করেন শুভেন্দু। সরিয়ে নেন তাঁকে দেওয় জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তাও।
তৃণমূলের একাংশের সঙ্গে শুভেন্দু সম্পর্কের বরফ গলাতে এরপরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর উদ্যোগেই অভেষক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসানো হয় শুভেন্দুকে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরও। এই বৈঠকের পরও অবশ্য মানভঞ্জন করা যায়নি নন্দীগ্রামের বিধায়কের। পরদিন সৌগত রায়কে হোয়াটসঅ্যাপে শুভেন্দু জানিয়ে দেন, ‘একসঙ্গে কাজ করা মুশকিল, মাফ করবেন।’ এরপরেই শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে জল্পনায় ইতি টানতে চাইছে তৃণমূল তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন খোদ তৃণমূলনেত্রী। সম্প্রতি দল বিরোধী কাজের জন্য শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী কনিষ্ক পণ্ডাকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। যিনি কিনা ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূল সম্পাদক।
এই আবহেই রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের সভা থেকে ফের ইঙ্গিত পূর্ণ মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে শুভেন্দুকে। বলেছেন, '২০২১ সাল মুক্তির স্বাদ দেবে'। সভায় শুভেন্দু বলেন, 'আশা করব ঈশ্বর আমাদের ২০২১ সালটা খুব ভাল দেবে, মুক্তির স্বাদ দেবে, আনন্দের স্বাদ দেবে৷' শুভেন্দুর এই বিতর্কিত মন্তব্যের পর তাঁর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা আরও বাড়তে শুরু করেছে। তিনি বলেছেন, 'মানুষের সঙ্গে কোনওদিন বিশ্বাসঘাতকতা করব না৷ মানুষের উপরে যদি অন্যায়, অত্যাচার হয়, বেকার যুবকরা যদি কর্মসংস্থান না পেয়ে যন্ত্রণায় কাতরায়, কৃষকরা যদি যন্ত্রণায় কাতরায়, যদি মানুষের মধ্যে উন্নয়নের জন্য আরও প্রত্যাশা থাকে, তাহলে শুভেন্দু অধিকারী সেটা করবে৷' এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন উত্তরবঙ্গে গেলেন সেদিনই শুভেন্দুর কলকাতায় হাজির হওয়া তাই নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এদিকে শুভেন্দু অধিকারীর বিধায়ক পদে ইস্তফা দেওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির। তাদের আশা, তার পরেই শুভেন্দু তাঁর নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করবেন।