সাংসদ-স্বামী সৌমিত্র খাঁ (Soumitra Khan) এবং তাঁর দল বিজেপি (BJP)-কে তুলোধোনা করলেন তৃণমূলের সুজাতা মণ্ডল খাঁ (Sujata Mondal Khan)। বুধবার বর্ধমানের সাতগেছিয়ায় তিনি বিজেপিকে হনুমানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বলেছেন, বিজেপির এই নেতাগুলো রামভক্ত হনুমান নয়, লম্বা লেজ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, লম্ফঝম্প করা হনুমান।
নাম না করে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary)-কে তাঁর কটাক্ষ, যার ঘরে তৃণমূল রয়েছে, তিনি নাকি অন্যের ঘরে বিজেপিকে পৌঁছে দেবেন। এদিন তিনি বলেন,যারা দুদিন পাত পেরে খায় বাউলের ঘরে কালকে খায় মতুয়া ঘরে পরশু খায় কৃষকের ঘরে তারা তো নিজেরাই ভুলে যাবে কোন দিন কোন ঘরে কি খেয়েছে তারা নাকি মেয়েদের যন্ত্রণা ঘোচাবে বাংলার দুঃখ-দুর্দশা ঘোচাবে।
কদিন আগেই পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকেই এক সাংসদ আর দুই বিধায়ক টিএমসি ছেড়ে বিজেপির ঘরে বসতি গড়েছে। তাই গেরুয়া শিবিরের বাসস্থান ছেড়ে আসা সুজাতা মন্ডল খাঁ কেই সাতগেছিয়ায় বিজেপির পালটা সভায় তুরুপের তাস করে পেশ করলো টিএমসি।
কদিন আগেই মুকুল রায় ঠিক এখানেই সভা করেছিলেন । আজ একই জায়গায় পালটা সভা করল পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেস।
পূর্ব বর্ধমানের সাতগেছিয়ায় টিএমসির সভায় দলের জেলা সভাপতি মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সহ অন্যরা থাকলেও মূল আকর্ষণ ছিলেন সুজাতা। এদিন সুজাতা প্রথম থেকেই ছিল আক্রমনের মেজাজে। একের পর এক কথার মাধ্যেম আক্রমণ করেন তার স্বামী সৌমিত্র খাঁ থেকে শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপি নেতৃত্বদের ।
এদিন সুজাতা বলেন, প্রচুর পদ পেয়েছেন শুভেন্দু ও তার পরিবার। ১০ বছর সব ক্ষমতা ভোগ করেছেন। তারপর মুখ্যমন্ত্রী হবার স্বপ্ন পূরণ হবে না দেখে বিজেপিতে ঝাঁপ মেরেছেন। তিনি নিজে একাধিক দপ্তরের মন্ত্রী, চেয়ারম্যান। তার পরিবারে প্রায় সবাই নানা পদে। আর কি বাকি ছিল? এমনকি যুব সভাপতিও ছিলেন।
যিনি বলেছেন, হরেকৃষ্ণ হরে হরে, বিজেপি ঘরে ঘরে। সুজাতার পালটা, তোমার ঘরেই তো তৃণমূল ভরে ভরে। নইলে একজন সাংসদ তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দেবার ঘোষণা করলেন। দলে তো অনেক বড় নেতা আছেন; তারা কি করলেন? নারীদের সম্মান ওই দলে নেই বলেই তিনি বিজেপি ছেড়েছেন দাবি করেন সুজাতা।
তিনি বলেন, রাম বিজেপির একার সম্পদ, এটা কি রামায়ণে লেখা আছে? তিনি বলেন বিজেপি ভুলক্রমে এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে মেয়েদের সম্মান বলে আর কিছু থাকবেনা। তাই যে দলে মেয়েদের সম্মান দেওয়া হয়, সেই তৃণমূলকেই ভোট দিন।
যার ঘরে তৃণমূল রয়েছে, তিনি নাকি অন্যের ঘরে বিজেপিকে নিয়ে যাবেন। কী করে হয়? হিসেবটা তো বোঝা যাচ্ছে না।
সুজাতা বলেন, মেয়েদের যন্ত্রনা মেয়েরাই বুঝবে। বাইরে থেকে উড়ে আসা ফঁড়ে নেতারা বুঝবে না। যারা দুদিন পাত পেরে খায়, আজ বাউলের ঘরে, কালকে খায় মতুয়া ঘরে, পরশু খায় কৃষকের ঘরে, তারা তো নিজেরাই ভুলে যাবে কোন দিন কোন ঘরে কী খেয়েছে। যে পরিবারকে ১০ বছর আগলে রেখেছিলাম নিজের স্বামী নিজের ঘর ভেবে, কিন্তু সে কেমন সুযোগসন্ধানী একটা অল্প বয়সী নারীকে একা ছেড়ে দিল, টিভিতে তালাক দিয়ে। ঝিনি বিজেপির খাওয়ার ও দেখানোর দাঁত আলাদা। যে বিজেপি তিন তালাক উঠিয়ে দেওয়ার নাটক করে, সেই বিজেপির সাংসদই নেতাদের সাথে মিলে নিজের স্ত্রীকেই তালাক দেয়।
সেই নেতারা কিন্তু প্রতিবাদ করার প্রয়োজন মনে করেনি । মুখে জয় শ্রীরাম বলেন । জয় শ্রীরাম সবার ভগবান। রামায়ণে একটা পাতা খুলে দেখান যেখানে লেখা আছে রাম শুধু বিজেপির ভগবান। কোথায় রামচন্দ্রের সুশাসন-আত্মত্যাগ বিজেপি ফলো করে। ওরা ফলো করে রামচন্দ্র যখন জঙ্গলে সীতা মায়ের অগ্নিপরীক্ষা নিয়েছিল ও একলা গর্ভবতী সীতাকে ছেড়ে দিয়েছিল, সেইটা। বিজেপির এই নেতাগুলো রামভক্ত হনুমান নয় লম্বা লেজ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো লম্ফঝম্প করা হনুমান ।
এরপরই সুজাতা বলেন, পশ্চিমবাংলার বিজেপি ক্ষমতায় এলে কত মেয়ের ঘর ভাঙবে বুঝে সিদ্ধান্ত নিন কাকে জেতাবেন। বিজেপি যেন কোনও ভোট না পায়।