"শীতলকুচি মাথাভাঙ্গা জোর পটকির ঘটনায় ১২৬ নম্বর বুথে ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের রিপোর্ট পর্যালোচনার পর ওই কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তদন্ত চলছে।" চতুর্থ দফার নির্বাচনের শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানালেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। একইসঙ্গে শীতলকুচিরই পাঠানটুলিতে আনন্দ বর্মনের মৃত্যুর ঘটনায় এখনও ২ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। অন্যদিকে চুঁচুড়ায় প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান আরিজ আফতাব।
চতুর্থ দফার নির্বাচনে বারেবারেই উত্তপ্ত হয় কোচবিহারের শীতলকুচি। মোট ৫ জনের মৃত্যু হয় এদিন। তার মধ্যে বাহিনীর গুলিতে ৪ জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। যদিও আত্মরক্ষার জন্যই গুলি চালানো হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় বাহিনীর। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের এডিজিপি জানিয়েছেন পেট্রোলিং-এ থাকা সিআইএসএফ জওয়ানদের ঘিরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। জওয়ানদের ওপরে হামলা চালানো হয়। চেষ্টা করা হয় রাইফেল কেড়ে নেওয়ার। এরপরেই আত্মরক্ষার্থে গুলি চালান জওয়ানরা। যার জেরে মৃত্যু হয় ৪ জনের।
পাশাপাশি বাহিনীর তরফে প্রায় একই কথা বলা হয়েছে। জানা গেছে, স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে মিলে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট পরিচালনা করছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। তখনই এক শিশু অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এরপরেই উত্তেজিত জনতা জওয়ানদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ভাঙচুর চালান হয় গাড়িতেও। প্রথমে জওয়ানরা আত্মরক্ষার্থে শূন্যে ৬ রাউন্ড গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছান সিআইএসএফ-এর কম্যান্ডার। উত্তেজিত জনতার সামনে চলে যান তিনি।
এর প্রায় ঘণ্টা খানেক পর প্রায় ১৫০ জনের একটি দল বুথে ভোট কর্মীদের ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। বুথে কর্তব্যরত হোমগার্ড, আশাকর্মীদেরও মারধর করা হয়। সিআইএসএফ-এর কম্যান্ডার জনতাকে সরাতে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়। জওয়ানদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয় বলেও অভিযোগ। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে শূন্যে ২ রাউন্ড গুলি চালান বাহিনীর জওয়ানরা। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। উল্টে ফের হামলা চালায় জনতা। এরপর জনতাকে সতর্ক করতে ৭ রাউন্ড গুলি চালান জওয়ানরা। কিন্তু তাতেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি জনতাকে। এরপর বাধ্য হয়েই নিজেদের বাঁচাতে গুলি চালায় বাহিনী। তাতেই মৃত্যু হয় ৪ জনের।
পাশাপাশি শীতলকুচিরই পাঠানটুলিতে এদিন ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন আনন্দ বর্মন নামে এক যুবক। তিনি এই বছর প্রথম ভোটার ছিলেন। নিহত যুবককে নিজেদের দলের কর্মী বলে দাবি করেছে বিজেপি।
অন্যদিকে এদিন ভাঙচুর চালানো হয়েছে চুঁচুড়া বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের গাড়িতেও। অভিযোগ, এদিন ওই বিধানসভা এলাকার ইশ্বরবাগের ৬৬ নম্বর বুথ দখলের চক্রান্ত করে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। পরিস্থিত বুঝে ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করেন তাঁর পোলিং এজেন্ট মাধবী ঘোষ। খবর পেয়ে ওই বুথে যান লকেট চট্টোপাধ্যায়। লকেট পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা। এমনকী ভাঙচুরও চালান হয় তাঁর গাড়িতে। দ্রুত তৎপর হয় বাহিনী। এরপর ঘটনাস্থল থেকে বের করা হয় লকেট চট্টোপাধ্যায়।