বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, নোবেলপ্রাপক অমর্ত্য সেন (Amartya Sen)-এর বাড়ি বিতর্কে তাঁর পাশে দাঁড়ালেন বাংলার বিশিষ্টরা। রবিবার বাংলা আকাডেমির সামনে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করলেন তাঁরা। এদিনের সভা থেকে বাংলার বিদ্বজ্জনেরা তুমুল আক্রমণ করেন বিজেপি (BJP)-কে।
আকাদেমির প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন এ রাজ্যের শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতির বিশিষ্টরা। কবি সুবোধ সরকার, চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন যোগেন চৌধুরী, পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, শিল্পী কবীর সুমন, চিত্র পরিচালক অরিন্দম শীল, সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েন, বাচিকশিল্পী সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। অমর্ত্য সেন কেন্দ্রের শাসকদলের সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তাদের নীতি সম্পর্কে অনেক মন্তব্য করেছেন। আর সেই কারণে তাঁকে বিভিন্ন সময় বিজেপির সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। আকাদেমির সামনে প্রতিবাদ সভার আহ্বান করেছিলেন রাজ্য়ে জৈবপ্রযুক্তি মন্ত্রী-নাট্যকার ব্রাত্য বসু (Bratya Bose)।
শিল্পী যোগেন চৌধুরি বলেন, ওঁর মতামতের সঙ্গে বিজেপির মতামত মেলে না। এটা পরিষ্কার। আর তাই এই কাজ। বিশ্বভারতীয় বর্তমান উপাচার্য বিজেপি ঘারনার লোক। তাঁকে আনা হয়েছে সেই কারণে। অমিত শাহ তো বিশ্বভারতীয় কেউ নন। তা হলে তাঁকে নিয়ে ঘুরে বেরানো হল কেন?
বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন বলেন, বিশ্বভারতীতে আঘাত দেওয়া মানে বাঙালিকে সবথেকে বেশি আঘাত দেওয়া। তাঁরা জানে না কে বেঁচে আছেন, কে নেই! অমর্ত্য সেন
এই সরকারকে সমালোচনা করেছেন। তিনি স্বাধীন মানুষ, তাঁর মতামতকে শ্রদ্ধা করি।
এদিন কবীর সুমন বলেন, বিজেপি নেতাদের ব্যাপারে কথা বলা আর বাবলা গাছকে আলিঙ্গন করা একই ব্যাপার। তবে আমরা ছেড়ে দেব না।
শান্তিনিকেতনে রয়েছে অমর্ত্য সেনের বাড়ি 'প্রতীচী'। ওই বাড়িকে ঘিরে বিতর্ক। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্য়ালয়ের একাশের দাবি, ওই বাড়ির সংলগ্ন জমির একাংশ তাদের। ব্রাত্য অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলায় অমর্ত্য সেনের সঙ্গে এমন করা হচ্ছে।
ব্রাত্য বসু (Bratya Bose) কেন্দ্রীয় সরকারের তুমুল সমালোচনা করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, অমর্ত্য সেনের পাঠভবন স্কুলে যোগাযোগ। তিনি সেখানকার ছাত্র ছিলেন শান্তিনিকেতনের সঙ্গে তিনি লতায়-পাতায় জড়িয়ে। তিনি বিজেপিবিরোধী মন্তব্য করায় শান্তিনিকেতন থেকে বিজপি তাঁর শিকড়টা তুলে দিতে চাইছে। বিজেপি বিরোধী কথা বললে ঘটি-বাটি-চাটি হয়ে যাবে। তাই আমরা সভা ডেকেছি।
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বোন, বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। অমর্ত্য যাতনা সহ্য করতে হয়েছে। অমর্ত্য সেনকে অপমান করা মানে রবীন্দ্রনাথকেও অপমান করা। তিনি ব্রিটিশদের বিরোধিতায় নাইট উপাধি ছেড়েছিলেন। তবে ব্রিটিশরাও কখনও বলেনি রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বভারতী থেকে উৎখাত করব, পাঠভবন উপড়ে ফেলে দেব।
এদিকে, বৃহস্পতিবার নবান্ন সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগের তীব্র নিন্দা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিনিকেতনের বাড়ি বিতর্কে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে এবার চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে অমর্ত্য সেনের পাশে থাকার কথাই বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কড়া নিন্দা করেছে বামেরাও। শনিবার রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, অমর্ত্য সেন আচার্য ক্ষিতিমোহন সেনের পৌত্র। তাঁদের বাসভবন ‘প্রতীচী’ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের লিজের ভিত্তিতে দেওয়া জমিতেই। অমর্ত্য সেনের মত বিশ্বখ্যাত এক ব্যক্তিত্বের বাসভবনকে ঘিরে অহেতুক বিতর্ক যাতে তৈরি না হয় তা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকেই দেখতে হবে।