পশ্চিম মেদিনীপুর জনসভা করবেন তৃণমূলনেত্রী। তাতে হাজির থাকতে হবে প্রতিবেশী পূর্ব মেদিনীপুরের সমস্ত সাংসদ ও বিধায়কদের। স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে তৃণমূলের তরফে এমনই নির্দেশ পাঠান হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশের তোয়াক্কাই করলেন না নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক। দলনেত্রী যখন মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে ভাষণ দিতে ব্যস্ত ঠিক তখনি নিজের কনভয় নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন শুভেন্দু।
এদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের জনসভা থেকে শুভেন্দু নাম না নিলেও তাঁকে বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। নির্বাচনের আগে ব্ল্যাকমেইল করে বিজেপির বন্ধুরা নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে জব্দ করতে পারবে না এমন কথাও বলেছেন। এমনকি ১৯৯৮ সালে কোনও রকম সংগঠন ছাড়াই কাঁথি এলাকায় দলের ভাল ফলের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন নেত্রী। নিশানা যে কোনদিকে তা দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। মমতা যখন ২০২১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল ক্ষমতায় ফিরছে বলে জনসভায় দলীয় কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে ব্যস্ত তখন নীরবেই নিজের গঢ় পূর্ব মেদিনীপুর ছেড়ে কলকাতার দিকে রওনা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী৷ দুপুরেই কোলাঘাট হয়ে পৌঁছে যান সুকিয়া স্ট্রিটে নিজের ফ্ল্যাটে। তবে ফ্ল্যাটে যাননি শুভেন্দু, সেখান থেকে ফের রওনা দেন এমজি রোডের দিকে।
দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার পর ও মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর শুভেন্দু যে এদিন মমতার জনসভায় অংশ নেবেন না সেই বিষটি মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। তাই তৃণমূলনেত্রীর জনসভা চলাকালীন তিনি কী করেন সেদিকে লক্ষ্য ছিল সকলরেই। সোমবার তাই শুভেন্দুর কলকাতায় আসা নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে তিলোত্তমায় নন্দীগ্রামের বেতাজ বাদশার কী কর্মসূচি রয়েছে তা তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের কাছেও স্পষ্ট নয়। শোনা যাচ্ছে এবার বিধায়ক পদ থেকে শুভেন্দু ইস্তফা দিতে পারেন। কারণ খাতায় কলমে এখনও তৃণমূল কংগ্রেসেরই সদস্য শুভেন্দু অধিকারী।
এদিকে রবিবার শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিক বৈঠক করবেন এমন খবর রটেছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত এমন কোনও সাংবাদিক বৈঠক হয়নি। এমন কী তাঁর ঘনিষ্ঠতা দাবি করেন, সাংবাদির বৈঠকের কোনও কথা শুভেন্দু নিজেও বলেলনি। পুরোটাই তৃণমূলের তরফে রটানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করে শুভেন্দু শিবির। এই অবস্থায় কলকাতায় এসে শুভেন্দু কী করেন সেদিকেই তাকিয়ে গোটা রাজনৈতিক মহল। কলকাতার বুকেই তিনি নিজের ভবিষ্যত রাজনৈতিক পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন কিনা, সেদিকেই নজর সকলের। এর আগে গত সপ্তাহেই সৌগত রায়ের আহ্বানে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করতে কলকাতায় এসেছিলেন শুভেন্দু। মঙ্গলবার সেই বৈঠকের পরেই রাতে কাঁথিতে ফিরে যান নন্দীগ্রামের সাংসদ। তারপর সৌগত রায়কে পাঠান তাঁর হোয়াটাসঅ্যাপ দলের সঙ্গে শুভেন্দুর সম্পর্ক একেবারে তলানিতে নিয়ে গিয়েছে।
এদিকে সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় গরহাজির ছিলেন শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী ও ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। পূর্ব মেদিনীপুরের দুই সাংসদের অনুপস্থিতি নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বাংলর রাজনীতিতে। মেদিনীপুরের মত এলাকায় অধিকারী পরিবার ছাড়া মমতার জনসভা ঘিরে তাই নতুন সমীকরণ দানা বাঁধছে বাংলার রাজনীতিতে।