Sikkim Tourism Problem: উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে দক্ষিণবঙ্গে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও নেই কোনও আশার আলো। আগামী কিছুদিন আপাপত ভোগান্তি চলবে বলে আবহাওয়া দফতরের ইঙ্গিত। এরই মধ্যে উষ্ণতার আবহ থেকে থেকে রেহাই পেতে উত্তরবঙ্গে, বিশেষ করে পাহাড়ে ভিড় বাড়ছে সমতলের পর্যটকদের। বুকিং বাড়ছে তরতরিয়ে। দার্জিলিং-কার্শিয়াংয়ের পাশাপাশি সিকিমেও বাড়ছে বুকিং। তবে পুরনো সমস্যা হিসেবে মাথাচাড়া দিয়েছে গাড়ি ভাড়া সমস্যা। যা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে পর্যটন মহলে।
ক্ষোভের আঁচ গিয়ে পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও। সম্প্রতি এক কেন্দ্রীয় সরকারি কর্তা সিকিমে ঘুরতে এসে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হন। তারপরই গ্রিভেন্স রিড্রেসাল সেলে অভিযোগ করেন। এরপর নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় সরকার। শুরু হয় পদক্ষেপ।
সিকিমে পর্যটকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ গাড়ি ভাড়া নিয়ে। থাকা খাওয়া বিনোদনের চেয়ে অনেক বেশি খরচ হয়ে যায় গাড়ি ভাড়ায়। সুযোগ বুঝে পর্যটকদের পকেট কাটে চালকরা। যা নিয়ে অভিযোগ থাকলেও, সিকিম সরকার খুব একটা গা করেননি কখনও। ফলে সমস্যা থেকেই যায়। একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই পরিস্থিতিতে এবার নড়েচড়ে বসল পর্যটন মন্ত্রক।কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক সিকিম পর্যটন দফতরকে চিঠি দিয়ে লাগামছাড়া গাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো উন্নয়নে নজর দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
গত ১৩ মে সেন্ট্রাল পাবলিক গ্রিভ্যান্স রিড্রেস অ্যান্ড মনিটরিং সিস্টেমের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে সিকিম সরকারকে। সেখানেই একাধিক বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে বলে একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, একাধিক পর্যটকের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। কেন্দ্রের এক আধিকারিকের সিকিম ভ্রমণের খারাপ অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। পারমিট এবং ট্যুরিস্ট স্পটে ভ্রমণ করানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সিগুলি পর্যটকদের থেকে বিপুল পরিমান টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ। বিষয়গুলি অবিলম্বে খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি মন্ত্রকের প্রাক্তন অতিরিক্ত কমিশনার কে পি ওয়াসনিক গত ২৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত সপরিবারে দার্জিলিং এবং সিকিম ভ্রমণে গিয়েছিলেন। কিন্তু সিকিম ভ্রমণ প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ জানিয়েছেন, গাড়ির দর আকাশছোঁয়া। পর্যটকদের লুঠ করা হচ্ছে। সিকিম সরকারের উচিত গাড়ির জন্য সুনির্দিষ্ট রেটচার্ট তৈরি করে দেওয়া।
দার্জিলিংয়েও বিভিন্ন জায়গায় গাড়িভাড়া বেড়েছে। এর মধ্যে পর্যটকদের ভিড় বাড়তেই গাড়ি ভাড়া অনেকটাই বেড়েছে বলে দাবি। প্রশাসনের তরফে এ নিয়ে বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন বলে দাবি উঠেছে পর্যটন ব্যবসায়ে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের। দার্জিলিং জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন,গাড়ি ভাড়া নিয়ে কোনও অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখে ব্য়বস্থা নেওয়া হবে।
সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরা। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সদস্য পার্থ গুহ জানিয়েছেন, সিকিমের জুলুক, নাথুলা এসমস্ত টুরিজম পয়েন্ট যেতে আলাদা করে ৪-৫ হাজার টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। গাড়ি ভাড়ার যা খরচ হচ্ছে পর্যটকদের, তাতে বিদেশযাত্রা হয়ে যায়। আক্ষেপ তাঁর। পার্থবাবুর দাবি, এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। পর্যটন মরশুম এলেই যথেচ্ছ ভাড়া নেয় সিকিমের গাড়িচালকরা। যা পর্যটকদের পকেট ফাঁকা করে দেয়। তবে দার্জিলিংয়ে খুব একটা ভাড়া বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। সামান্য ৪-৫০০ টাকা ভাড়া কমবেশি হচ্ছে বলে জানান তিনি। বনভয়েজ পর্যটনের তরফে সৌমিত্র কুন্ডু জানিয়েছেন, পর্যটকের এনকোয়ারি বেড়েছে। আগামী কয়েকদিনে আরও সংখ্যা বাড়বে বলে আশাবাদী। দার্জিলিংয়ে ভাড়া বাড়েনি। তবে সিকিমে সমস্যা রয়েছে।