একেবারে দোড় গোড়ায় দোলযাত্রা। মনের সব ব্যথা, রাগ-অভিমান ভুলে সকলে মেতে উঠবেন রঙের উৎসবে। এমনিতেই বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। তবে অনেক উৎসবগুলির মধ্যে সকলের পছন্দের তালিকায় প্রথমের দিকেই থাকে দোলযাত্রা (Dolyatra) বা হোলি (Holi)।
তবে উৎসবের বিশেষ দিনগুলি ছাড়া খুব একটা কাজ থেকে বিরাম পান না টেলি জগতের তারকারা। তাই চার বাংলা ধারাবাহিকের জনপ্রিয় নায়িকারা এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে আজতক বাংলার সঙ্গে শেয়ার করলেন তাঁদের হোলির প্ল্যানিং ও নস্টালজিয়া।
এই বছরই জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে 'খড়কুটো'র গুনগুন ওরফে তৃণা সাহার (Trina Saha)। তাই এবারের দোল নিঃসন্দেহে তাঁর স্পেশাল। তৃণা বললেন, "প্রতিবারই হোলিতে প্ল্যানিং থাকে কাছের বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে। এই বছর আবার আমার এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি রয়েছে সঙ্গে। তবে অন্যান্য বার আরও অনেক বেশি প্ল্যান হয়। হয়তো এবার বিয়ে হয়ে গেছে বলে নীলের সঙ্গে এখনও কোনও বিশেষ প্ল্যান হয়নি আলাদা করে। তবে যাই হোক না কেন এবার সবটাই খুব স্পেশাল হবে আমার জন্য।" হোলি নিয়ে ভিন্ন রকমের মজার স্মৃতি জড়িয়ে থাকে বেশীর ভাগ মানুষের। তৃণাও শেয়ার করলেন এরকমই মজার এক গল্প। অভিনেত্রী বললেন, "ছোটবেলায় প্রথমবার যখন ভাঙ খেয়েছিলাম, খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল! প্রায় ৪৮ ঘণ্টা আমি উঠতে পারিনি ঘুম থেকে। খুব বকা খেয়েছি বড়দের কাছে। তারপর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কোনও দিনও আর ভাঙ খাবো না।" হোলি তৃণার খুব পছন্দের উৎসব। রকমারি রঙ পছন্দ তাঁর। কিন্তু কাজ থাকার জন্য এই বছর শুধু আবিরেই রাঙা হবেন তিনি।
কিছুদিন আগেই পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন 'কি করে বলবো তোমায়' ধারাবাহিকের রাধিকা সেন বা রিয়েল লাইফের স্বস্তিকা দত্ত (Swastika Dutta)। অভিনেত্রীর জীবনেও এই বছরটা একটু অন্য রকম। জীবনে এসেছে মনে মানুষ, সঙ্গীতশিল্পী শোভন গাঙ্গুলী। হোলির প্ল্যানিং নিয়ে স্বস্তিকা বললেন, "আমি মন থেকে খুব রঙিন। কিন্তু ছোটবেলা থেকে খুব একটা রঙ খেলিনি। এছাড়া এদিন বাড়ির জামাকাপড় পরলেও আমি সেটা সাদা রঙেরই পরি। আমার একটা ব্যাপার আছে, আমি যে কোনও উৎসব সেভাবে উদযাপন করতে না পারলেও, নিজেকে খুব সেই উৎসবের সঙ্গে সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করি। আর এমনিতে যেহেতু ছুটি খুব একটা পাই না, একটা দিন ছুটি পাবো। আর ছুটি মানেই ল্যাদ, আর ল্যাদ মানেই স্বস্তিকা (হেসে)!" সেই সঙ্গে ছোটবেলার স্মৃতি প্রসঙ্গে তিনি বললেন, " ছোটবেলায় ছাদে উঠে, বাবা-মা, দাদু-দিদার সঙ্গে রঙ খেলতাম কিছুটা। বন্দুক পিচকারী ও আরও বিভিন্ন রকমের পিচকারী জমানোটা একটা হবি ছিল। তবে এখন বড় হওয়ার পর অনেক কিছু বদলে গেছে। তবে আবিরের রঙ বলতে আগেও আমার জন্য লাল ছিল, এখনও তাই আছে।" বিশেষ মানুষের সঙ্গে এদিনের প্ল্যানিং নিয়ে স্বস্তিকা আরও বললেন, " আমরা কোনও দিন কোনও প্ল্যান করি না সেভাবে। তবে আমাদের দুজনের জন্যই বিশেষ মানুষ জীবনে আসলেও এতদিন ধরে আমরা যেভাবে কাটিয়ে এসেছি, সেটা সেরকমই থাকবে। তাছাড়া ওঁর কাজ আছে। কোভিড পরিস্থিতির জন্য এবার আমার কাজ নেই। তবে কাজ থাকলেও মন্দ হত না।"
টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ শ্রুতি দাস (Shruti Das)। বলা যায় এই মুহূর্তে 'দেশের মাটি'-র নোয়া দর্শকদের একেবারে মনের কাছের। হোলি উপলক্ষে নিজের কাটোয়ার বাড়িতে যাচ্ছেন অভিনেত্রী। ছোটবেলার দোলের গল্প শেয়ার করলেন শ্রুতি। তিনি বললেন, " আগে ছোটবেলায় কাটোয়াতেই থাকতাম। তখন খুব রঙ খেলতাম। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝেছি সেই রকমারি রঙ তোলাটা একটু চাপের। তাই সবটাই এখন আবিরে এসে দাঁড়িয়েছে। আগে মাঝে মধ্যেই শান্তিনিকেতনে যেতাম বসন্ত উৎসবে। এখন তো সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে! বাড়ি ছাড়া আর কোথাও যাবো এদিন, সেটা ভাবতেই পারি না। তাই ছোট থেকে বড় হওয়ার বেশীর ভাগ স্মৃতিটাই কাটোয়া ঘিরে।" লাল রঙা আবিরই বেশি পছন্দ শ্রুতিরও। তাহলে বিশেষ মানুষ, পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারের সঙ্গে কাটাবেন না এই বছর? অভিনেত্রী জানালেন, "এবছর নয়। পরের বছর থেকে তো একসাথে, তাই!" সেই সঙ্গে আজতক বাংলাকে শ্রুতি আভাস দিলেন সব ঠিক থাকলে আগামী বছরই বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন তিনি।
টেলি জগতের আরও এক জনপ্রিয় মুখ, সকলের প্রিয় রাণী মা, অর্থাৎ 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি' বা দিতিপ্রিয়া রায়কে (Ditipriya Roy) চেনেন না এরকম বাঙালি বর্তমানে খুবই কম। এবছরের হোলির স্পেশাল প্ল্যান আজতক বাংলার সঙ্গে শেয়ার করলেন অভিনেত্রী। দিতিপ্রিয়া বললেন,"এই বছর সেরকম কোনও প্ল্যানিং নেই। আমরা সকলেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে একটু চিন্তিত। তাই বাড়িতেই ছোট করে সকলে এক জায়গায় হবো। যারা একদম চেনা জানা, যাঁদের সঙ্গে কাজ করি বা সারাদিন থাকি, তাঁদের সঙ্গেই দিনটা কাটাবো। আর আলাদা করে রঙ খেলার কোনও রকম বিশেষ প্ল্যান নেই। তবে আবির তো কিছুটা থাকবেই। কারণ ওটাই আমি পছন্দ করি।" অভিনেত্রী আরও যোগ করলেন, "আমি ছোট থেকেই আবিরই খেলি। এছাড়া আমার বাড়ি থেকেও অন্যান্য রঙ খেলা কেউ পছন্দ করেন না। আর যেহেতু ছুটির দিন, তাই কাছের লোকজন মিলে খাওয়া-দাওয়া আড্ডা, এসব বিকেল অবধি চলে। খুব মজা হয়। "
আরও পড়ুন: রঙের উৎসব! তবে অনেকটাই আলাদা দোল আর হোলি
অতিমারী কিছুটা ছন্দপতন ঘটিয়েছে ঠিকই। তবে রঙের এই উৎসবে নিজেদের মতো করে গা ভাসাবেন সকলেই। আজতক বাংলার তরফ থেকে সকলের জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা।