করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে টলিউড ইন্ডাস্ট্রি (Tollywood Industry)। পরবর্তী ছবির ঘোষণা করলেন পরিচালক অতনু ঘোষ (Atanu Ghosh)। ছবির নাম 'শেষ পাতা' (Shesh Pata)। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee), গার্গী রায় চৌধুরী (Gargi Roy Chowdhury) এবং বিক্রম চট্টোপাধ্যায় (Vikram Chatterjee)। ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনের ব্যানারের এই ছবির মাধ্যমেই প্রায় সাড়ে তিন বছর পর বড় পর্দায় ফিরছেন বিক্রম।
ঋণ চুকিয়ে দেনামুক্ত হওয়ার কথা সাধারণত সব সময় শোনা যায়। কিন্তু ঋণ শুধুমাত্র টাকার অঙ্কেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এটা বাস্তবে আরও অনেক কিছুর সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। ঋণ, তা পরিশোধ এবং এরপর যে মুক্তি বা মানসিক শান্তি মেলে, এই তিনটি বিষয়বস্তুর ওপর জোড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে 'শেষ পাতা'। যে কোনও ধরণের ঋণে কতটা মানসিক চিন্তা থাকে এবং সেটা কোনও ব্যক্তির মনকে কতটা ভারাক্রান্ত করতে পারে তা হয়তো বেশিরভাগ মানুষেরই জানা। বলা যায় এটি যে কোনও ক্ষেত্রেই ঋণ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের জীবনেই প্রভাব ফেলে। নতুন এই থিমেই গল্প গাঁথতে চলেছেন পরিচালক।
এর আগে 'ময়ুরাক্ষী' ও 'রবিবার' ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন প্রসেনজিৎ ও অতনু। দুটি ছবিই যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে। ফের একসঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে অতনু ঘোষ জানান, "আমরা পারস্পরিক বিশ্বাস এবং প্রত্যাশার একটি বন্ডিং শেয়ার করি। আমি মনে করি, যে কোনও অভিনেতা-পরিচালকের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ফ্যাক্টরগুলি থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, একটি ছবি শেষ হওয়ার পরে প্রসেনজিৎ, আমার সঙ্গে আবার কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করে সব সময়। সেটা সব অভিনেতাদের সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে কিন্তু হয় না!"
আরও পড়ুন: 'মিঠাই', 'অপরাজিতা অপু'-র জনপ্রিয়তা ছুঁয়ে TRP বদলাতে পারবে 'ধুলোকণা', 'মন ফাগুন'?
'শেষ পাতা'-র গল্প মূলত চারটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। বাল্মীকি চরিত্রে অভিনয় করছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যিনি একজন অহংকারী নন-কনফর্মিস্ট ফিকশন লেখক। প্রায় আট বা নয়ের দশকে অপ্রচলিত থিমের বাংলা চলচ্চিত্র সার্কিটে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। তবে কিছু ঘটনার কঠোর পরিবর্তন তাঁর জীবনের গতিপথ একেবারে বদলে দেয় এবং নিছক অবহেলা ও বিচ্ছিন্নতার জীবনযাপন করতে তিনি বাধ্য হন।
তিরিশ বছর বয়সী এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শৌনকের চরিত্রে দেখা যাবে বিক্রম চট্টোপাধ্যায়কে। তাঁর পরিবারকে ঘিরে রয়েছে অনেক দায়িত্ব। জীবনে একটা লক্ষ্যে তাঁকে পৌঁছতেই হবে। প্রায় সাত বছর ধরে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে দীপার সঙ্গে, যে একজন সেরামিক ফ্যাক্টরির শিল্পী। দীপাকেও প্রতি নিয়ত লড়তে হয় নিজের অস্তিত্ব ও মর্যাদার স্বার্থে। ছবিতে এই চরিত্রটি করছেন রয়তি ভট্টাচার্য। (Rayati Bhattacharya)
আরও পড়ুন: Toofaan Review: প্রেডিক্টেবল গল্পে পাওনা শিল্পীদের অভিনয়
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে এই ছবিতে। মেধার ভূমিকায় দেখা যাবে অভিনেত্রী গার্গী রায় চৌধুরীকে। সংবেদনশীল এবং অত্যন্ত মার্জিত এক মধ্যবয়সী মহিলা মেধা। হঠাৎই জীবনে নিজেকে পরিত্যক্ত অনুভূত হয় তাঁর। খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাওয়া উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে হবে তাঁকে। হঠাৎই এই চারজনই একটা সাধারণ জায়গায় এসে দাঁড়ায়। কীভাবে তাঁরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি, স্বপ্ন বা বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষার ফের সন্ধান পায়, এভাবেই 'শেষ পাতা'-র গল্প এগোয়...
অতনু ঘোষ বলেন, "শেষ পাতা', মূল্যবোধ, নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, বিচ্ছিন্নতা এবং একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে আলোর সন্ধানের গল্প। আসলে ঋণের সঙ্গে বয়স, চেহারা বা লিঙ্গের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রতিদিন আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়, যারা কোনও রকম ঋণ নিয়েই হয়তো ঘুরে বেড়াচ্ছেন।"
আরও পড়ুন: 100 Years Of Satyajit Ray: জানেন পথের পাঁচালীর সর্বজয়া ছিলেন 'নিষিদ্ধ বামপন্থী' দলের সক্রিয় সদস্যা?
এর আগে নববর্ষের সকালে এই ছবি নিয়ে একটা আভাস দিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তবে বিস্তারিত জানা যায়নি তখন। তাঁর কথায়, "অতনুর সঙ্গে এই নিয়ে তিনটি ছবিতে কাজ করছি। ওঁর স্টোরি টেলিং অন্য রকমের। গল্পে আমি বাল্মীকি নামে এক লেখকের চরিত্রে, যার এক সময়ে বেশ নামডাক ছিল। কিন্তু তার জীবনেও অনেক ঘটনা ঘটে যায়... চরিত্র নিয়ে খুব বেশি এখনই বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, এমন চরিত্রে আমি আগে অভিনয় করিনি। ভারতীয় সিনেমাতেও এমন চরিত্র খুব কম তৈরি হয়েছে।"
ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের কণ্ঠে গান গাইবেন গার্গী রায় চৌধুরী। তিনি জানালেন, "এমন অনেক মানুষ আছে, যাকে হয়তো আমরা খিটখিটে, কিপটে... এভাবে চিনি, কিন্তু সেই মানুষটির অন্তরের আলো দেখাবে এ ছবি। এমনই একজন মানুষের বাড়িতে লেখালিখির কাজ নিয়ে আসে মেধা। সেই চরিত্রে রয়েছি আমি। ছবিতে আমার লুকটা একদম নতুন।"
বিক্রম চট্টোপাধ্যায় বললেন, "একে এত বছর পরে ছবির কাজ, তার উপর অতনুদার মতো পরিচালক, এত ভাল কাস্টিং... সব মিলিয়ে খুব ভাল লাগছে। এখন শুধু শ্যুটিং শুরুর অপেক্ষায়। আমার চরিত্রটাও ইন্টারেস্টিং।"
'শেষ পাতা'-র প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান বলেন, "অতিমারীর মধ্যে এমন বিষয় তুলে ধরতে চাই, যা সিনেমাপ্রেমীদের মনের খোরাক জোগাবে। অতনুর সঙ্গে এটা আমাদের চতুর্থ কাজ। আশা করি, এই ছবিটিও ‘ময়ূরাক্ষী’-র মতোই দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।"
আরও পড়ুন: Ena Saha Exclusive: বডি শেমিং থেকে 'যশরত'! বিস্ফোরক এনা সাহা
করোনা পরিস্থিতি কিছুটা ঠিক হলেও এখনও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি। সেই সঙ্গে রয়েছে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা। সব মিলিয়ে কিছুটা ভীত ছবির গোটা টিম। তবে সব ঠিক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে শ্যুটিং শুরু হবে এই ছবির এবং চলতি বছরের শীতেই 'শেষের পাতা' প্রেক্ষাগৃহে দেখতে পাবেন দর্শকেরা।