দেবীর বোধন হতে এখনও বাকি ৮ দিন। কিন্তু এখন থেকেই ঠাকুর দেখার আগ্রহ তুঙ্গে। কারণ প্রতি বছরের মতো এবারও মহালয়ার একদিন আগেই পুজো প্যান্ডেলের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতেই যেন উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে যাবে। কোন কোন প্যান্ডেল উদ্বোধন হবে মহালয়ার আগেই? কোন প্যান্ডেলে ঢুঁ মারা যাবে এখনই? রইল তালিকা...
সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তের যুগে দাঁড়িয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আজকাল পুজোর বহু আগে থেকেই কলকাতার বেস্ট পুজো প্যান্ডেলগুলির ট্রেলার দেখে ফেলেছে আমজনতা। তবে ওই অল্পেতে কি আর স্বাদ মেটে? ভিড় ঢেলে, গলদঘর্ম হয়ে, প্রিয়জনের হাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখার মজাটাই আলাদা। সারাবছর মানুষ অপেক্ষা করে থাকে এই ক'টা দিনের জন্য। ফলে মুখ্যমন্ত্রী ফিতে কাটতেই প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে জনতার ভিড় উপচে পড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সেক্ষেত্রে কোনও কোনও পুজো উদ্যোক্তারা আবার উদ্বোধন আগেভাগে হলেও জনসাধারণের জন্য এখনও প্যান্ডেল খুলে দিচ্ছেন না। শেষ মুহুর্তের কিছু তুলির টান বাকি রয়ে গিয়েছে। তাই মহালয়ার আগে-পরে উদ্বোধন হলেও প্রতিমা দর্শন করা যাবে না দ্বিতীয়া কিংবা তৃতীয়ার আগে। কোন কোন প্যান্ডেল রয়েছে সেই তালিকায়?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি বছরই শহরের তাবড় বড় পুজোগুলির উদ্বোধন করেন। এবারেও তালিকায় কোনও অদলবদল থাকছে না। দ্বিতীয়ার দিন তিনি উদ্বোধন করবেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো। এবারের থিম নিউ জার্সির অক্ষরধাম মন্দির। যদিও শনিবার উদ্বোধন হলেও সেদিন থেকেই দর্শকদের জন্য খোলা হবে না প্যান্ডেলের দরজা। মহালয়ার দিন থেকে দর্শন করা যাবে মণ্ডপ। তবে প্রতিবছরই এই পুজোর আকর্ষণে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন। ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। অফিস টাইমে যানজটেও নাকাল হন সাধারণ মানুষ।
পুজোয় আবারও চমক নিয়ে হাজির শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব। কখনও সেখানে দেবীমূর্তি অবস্থান করে পৃথিবীর সুউচ্চ ইমারত ‘বুর্জ খলিফা’য়, কখনও ভ্যাটিকান সিটির ব্যাসিলিকায়, কখনও আবার ডিজনিল্যান্ডে। ২০২৫-এও তাদের পুজোয় রয়েছে বড়সড় চমক। এবছর শ্রীভূমির থিম নিউ জার্সির স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম মন্দির। নিউ জার্সির বিশাল এলাকা জুড়ে শ্বেতপাথরে তৈরি এই মন্দির খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আর তাই এবছর সেই মন্দিরকেই থিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন শ্রীভূমির কর্তারা।
এরপর মহালয়া অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বর রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছ দক্ষিণ কলকাতার তাবড় কিছু পুজো মণ্ডপ। যেমন চেতলা অগ্রণী, সেলিমপুর, বাবুবাগান সর্বজনীন, ৯৫ পল্লী, যোধপুর পার্কের মণ্ডপ।
প্রতিবারের মতো এবারও মহালয়ার দিন চেতলা অগ্রণী পুজো মণ্ডপে প্রতিমার চক্ষুদান করবেন তিনি। রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমের এই পুজো প্রতিবছরের মতো এবারও অভিনব থিমে সেজে উঠেছে। এবার তাদের ভাবনা, 'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে'। এই মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে ২৬ লক্ষ রুদ্রাক্ষ। যা নিয়ে আসা হয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, নেপাল, বারাণসী এবং উত্তরকাশী থেকে। বাংলার ৫ জেলার ২০০ শিল্পী এই বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে ওই বিপুল পরিমাণ রুদ্রাক্ষ দিয়ে অভিনব মণ্ডপ তৈরি করেছেন।
সেলিপুর পল্লীর এ বছরের থিম ‘প্রহরী’। গোটা বাংলার লোকসংস্কৃতি উঠে আসছে দক্ষিণ কলকাতার ঐতিহ্যবাহী পুজো বাবুবাগানের মণ্ডপে। বাবুবাগানের পুজোর মণ্ডপে গড়ে উঠছে আস্ত এক রাজপ্রাসাদ। বাবুবাগানের পুজোর মণ্ডপে পুজোর আনন্দে শামিল হবেন বাংলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন লোকশিল্পীরাও। প্রতিমা তৈরি করছেন প্রদীপ রুদ্র পাল। আবহ সঙ্গীতের দায়িত্বে রয়েছেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী কল্যাণ সেন বরাট।
রত্নগর্ভা বাংলার সোনার সন্তানদের স্মরণ করছে যোধপুর পার্কের ৯৫ পল্লী অ্যাসোসিয়েশন দুর্গোৎসব কমিটি কর্তৃপক্ষ। মাইকেলের কবিতার লাইন আশ্রয় করেই তাঁদের এ বারের পুজোর থিম 'হে বঙ্গ ভাণ্ডারে...।' শিল্পী শক্তি শর্মার তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা এবং মণ্ডপ। পাশাপাশি ৭৪তম বর্ষে যোধপুর পার্কে এ বছরের থিম 'আদি অনন্ত হর হর গঙ্গে...।'
পদযুগলের ভরসায় শহর পরিক্রমা যাঁদের নেশা, তাঁদের অনেকেই নামী পুজোগুলির কবে থেকে দর্শন করা যাবে তা জানতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধন করলেই যে সব প্যন্ডেলে প্রবেশ করা যাবে তা কিন্তু নয়। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে দ্বিতীয়া বা তৃতীয়া পর্যন্ত।
রাজ্যের শাসকদলের উৎসব সংখ্যার সূচনা ছাড়াও ভার্চুয়াল মাধ্যমে জেলার পুজোর উদ্বোধন করবে মুখ্যমন্ত্রী। কোন পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন হবে, তার তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। যে সব পুজোর উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রী করবেন, সেগুলির উদ্যোক্তারা প্রস্তুতি শেষ করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন । বিশেষত কলকাতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জেলাগুলিও নিজেদের প্যান্ডেল, প্রতিমা ও থিমে নতুনত্ব আনার মরিয়া চেষ্টা করেছে। প্রতিবারের মতো এবারও জেলায় জেলায় অভিনব থিমের পুজো হচ্ছে।
উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী নিজে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উদ্বোধন করায় জেলার পুজোগুলিরও কদর অনেকটা বেড়ে যায় । একইসঙ্গে, কলকাতার পুজোর সঙ্গে তাল মেলাতে উৎসাহ পান জেলার শিল্পীরা । ফলে এবছরও মহালয়া থেকেই ভার্চুয়াল উদ্বোধন নিয়ে উন্মাদনা রয়েছে ৷