শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিনের অভাবে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা শুরু হয়। বিশেষ করে বাড়ন্ত বয়সের জন্য কিছু বিশেষ ভিটামিন সহ খনিজ যৌগ গুরুত্বপূর্ণ। আসুন জেনে নেওয়া যাক, সবিস্তারে।
ক্যালসিয়াম
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যালসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, যার কারণে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে। মেনোপজের পর এই সমস্যার সম্মুখীন হোন বহু মহিলারা। ক্যালসিয়াম পেশী, স্নায়ু, কোষ এবং রক্তনালীকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। ৫০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের এবং ৭০ বছরের বেশি পুরুষদের প্রাপ্তবয়স্কদের, তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। খাদ্যতালিকায় দুধ, দই ও পনির অন্তর্ভুক্ত করুন।
ভিটামিন বি১২
ভিটামিন বি১২ রক্ত ও স্নায়ু কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। এই ভিটামিন মাংস, মাছ, ডিম এবং দুগ্ধজাত খাবারে পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন বি ১২ ট্যাবলেট এবং শক্তিশালী খাবারের মাধ্যমেও নেওয়া যেতে পারে। ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অ্যাট্রোফিক গ্যাস্ট্রাইটিস রয়েছে, যার কারণে শরীর খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন বি ১২ সঠিকভাবে পেতে সক্ষম হয় না।
ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি পেশী, স্নায়ু এবং ইমিউন সিস্টেমকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি-এর সবচেয়ে ভাল উৎস সূর্যের আলো, কিন্তু এক বয়সের পর সূর্যের রশ্মি শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সক্ষম হয় না। ভিটামিন ডি খাবার থেকে সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যায় না, তবে চর্বিযুক্ত মাছ যেমন স্যালমন, ম্যাকেরেল এবং সার্ডিন ভিটামিন ডি-এর ভাল উৎস।
ভিটামিন বি৬
এই ভিটামিন শরীরকে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন বি৬ শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিটামিন বি৬ বৃদ্ধ বয়সে মানুষের স্মৃতিশক্তিও বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই ভিটামিনের সবচেয়ে ভাল উৎস হল ছোলা। এছাড়া চর্বিযুক্ত মাছ এবং ফর্টিফাইড খাবারও এই ভিটামিনের ভাল উৎস।
ম্যাগনেসিয়াম
ম্যাগনেসিয়াম শরীরে প্রোটিন ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ব্লাড সুগার স্থিতিশীল রাখে। আপনি বাদাম, বীজ এবং শাক থেকে এটি পেতে পারেন। বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে ডায়েটে মনোযোগ না দিয়ে মানুষ বেশি ওষুধ খেতে শুরু করে, যার কারণে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়।
প্রোবায়োটিকস
প্রোবায়োটিকগুলি অন্ত্রের জন্য সেরা বলে বিবেচিত। এটি দইয়ের মতো একাধিক খাবার থেকে নেওয়া যেতে পারে। এটি শরীরকে ডায়রিয়া এবং অ্যালার্জি থেকে রক্ষা করে। যদি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়, বা কোনও চিকিৎসা সমস্যা থাকে, তাহলে এই ধরনের খাবার খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
ওমেগা ৩
এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কারণ আপনার শরীর এটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করতে পারে না। ওমেগা-৩ চোখ, মস্তিষ্ক এবং শুক্রাণু কোষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অ্যালজাইমার্স এবং আর্থ্রারাইটিসের মতো রোগ থেকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে। এর জন্য আপনার ডায়েটে ওমেগা-৩ ফ্যাটি ফিশ, আখরোট, ক্যানোলা অয়েল বা শণের বীজের মতো খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
সেলেনিয়াম
সেলেনিয়াম কোষকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এই কারণে, থাইরয়েড সঠিকভাবে কাজ করতে থাকে। সেলেনিয়াম পেশীকেও শক্তিশালী করে। এটি ডিমেনশিয়া, থাইরয়েড এবং ক্যান্সারের মতো বয়সজনিত রোগ থেকেও রক্ষা করে। এজন্যে খাদ্যতালিকায় মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, পনির, মাশরুম, ব্রাউন রাইস, কাজু ও কলা রাখুন।