বড় দেড়-দুকেজির পাকা ইলিশ। সর্ষে দিয়ে মাখামাখা ঝোল। আহ! তার স্বাদই আলাদা। কিন্তু এ দৃশ্য কী চিরতরে ঘুচে যেতে চলেছে? ইলিশ কী আকারে ছোট হতে শুরু করেছে? তাহলে বড় ইলিশ কী আর মিলবে না?
এমনই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে ইলিশ বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন ইলিশের আকার ছোট হয়ে চলেছে ক্রমশ। এমনিই এমন বলছেন না তাঁরা। বেশ কয়েক বছরের কঠোর গবেষণার পর তাঁরা এমন আশঙ্কার বাণী শুনিয়েছেন।
ক্রমেই আকারে ছোট হয়ে আসছে দেশের নদীতে ধরা পড়া ইলিশ। ছোট হচ্ছে মাছের ডিম্বাশয়ের আকারও। কমে যাচ্ছে ডিমের পরিমাণও। ছোট আকৃতির মাছের ডিম থেকে জন্ম নেওয়া ইলিশও হচ্ছে খর্বাকৃতির।
এর মধ্যে আবার অনেক মাছ ডিম দিচ্ছে অল্প বয়সে। সেই ডিম থেকে জন্ম নেওয়া ইলিশও হচ্ছে আকারে ছোট। সব মিলিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশের একদল গবেষক জানিয়েছেন, পরিবেশ ও জিনগত কারণে ইলিশের এই পরিস্থিতি হচ্ছে। ইলিশ গবেষণার রিপোর্ট বলছে, নদ-নদী ও সাগরে ইলিশের বার্ষিক সর্বোচ্চ ধরার মাত্রা প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন। এর চেয়ে বেশি মাছ ধরা হলে ইলিশের সংখ্যা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, একটি ইলিশ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সমুদ্রে চলে যায়। আবার ফিরে আসছে নদীতে। কিন্তু সব মাছ যেতে পারছে না। নদীগুলোতে পলি জমে নাব্যতা কমেছে। ফলে অনেক মাছ নদীতেই থেকে যাচ্ছে।ফলে নদীতে সমুদ্রের মতো জায়গা ও পরিস্থিতি না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ইলিশের সঠিক বৃদ্ধি।
গবেষকদের মতে, প্রথম শারীরিক মিলনের জন্য ইলিশ পরিপক্ক হয় ২৬ সেন্টিমিটারে অথবা এক বছর দুই মাস বয়সে। পুরুষ ও স্ত্রী ইলিশের সাইজ আনুমানিক ৩৩ সেন্টিমিটার হলে পরিপক্ব হয়, যখন তাদের বয়স হয় এক বছর। এসময় পুরুষ-স্ত্রী উভয়ই ইলিশ প্রজনন উপযোগী হয়। ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন মরশুম হচ্ছে অক্টোবর-নভেম্বর ও ফেব্রুয়ারি-মার্চ।
বাংলাদেশের চাঁদপুরে ইলিশ গবেষকরা জানিয়েছেন, ইলিশের আকারের ক্ষেত্রে দুটি জিনিস দেখা হয়। এর মধ্যে একটি কত গ্রাম ওজনে ইলিশের যৌন পরিপক্বতা আসে, আরেকটি কত বছরে যৌন পরিপক্বতা আসে।
মূলত ইলিশের যৌন পরিপক্বতা আসে ২৬ সেন্টিমিটার অথবা এক বছর দুই মাসে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই সময়ের মধ্যে ইলিশ যেমন বড় হওয়ার কথা তেমন বড় হচ্ছে না। ছোটই থেকে যাচ্ছে।
এ ধরণের ইলিশের সংখ্যাই এখন বেশি। বড় আকৃতির ইলিশ তার থলিতে যে পরিমাণ ডিম ধারণ করতে পারে, ছোট আকৃতির এই মাছ সেই পরিমাণ ডিম রাখতে পারে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ইলিশের বিস্তারে প্রভাব পড়বে। ইলিশ ছোট হওয়ার কারণ আরও একটি কারণ হলো তাপমাত্রা ও জিনগত পরিবর্তন।
অন্য এক গবেষক বলেন, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ইলিশের আবাসস্থল। এটি পরিবেশ বা জলদূষণের কারণেও হতে পারে। তিনি আরও বলেন, অল্প বয়সেই মাছ ডিম দিচ্ছে। এটা কিন্তু খারাপ বিষয়। কারণ এই মাছ যখন বাচ্চা দেবে, স্বাভাবিক কারণেই সেটি ম্যাচিওরড হবে না।
ফলে ভবিষ্যতে কয়েক বছরের মধ্যে বড় দেড়-দুই কেজি আকারের ইলিশ ইতিহাস হয়েই থেকে যেতে পারে। পাতে পড়বে শুধু ছোট ছোট ইলিশ। ইলিশকে সংরক্ষণ ও উপযুক্ত পরিবেশ না দিতে পারলে বাঙালির পাত থেকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছেই।