পিরিয়ডস (Periods) সাধারণ জৈবিক প্রক্রিয়া। সাধারণত ১২ বছর হয়ে গেলেই, মেয়েদের পিরিয়ডস হওয়া শুরু হয়, যা মেনোপজের ৪৫-৫৫বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময়ে, মেয়েদের বা মহিলাদের মধ্যে অনেক হরমোন পরিবর্তন এবং শারীরিক পরিবর্তন হয়, যে কারণে মুড সুইং, রাগ, বিরক্তি এবং আবেগপ্রবণ হওয়ার মতো সাধারণ বিষয় দেখা যায়।
এছাড়াও, কিছু মহিলার ক্ষেত্রে পিরিয়ডসের ক'টা দিন তলপেট, কোমর ও পেতে অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয়। কারও কারও আবার সবকিছু স্বাভাবিক থাকে। যাঁরা ব্যথা অনুভব করেন না, তাঁরা ব্যায়াম ছাড়া বাকি সব কাজই করে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মেয়েরা বা মহিলারা এই দিনগুলিতে ব্যায়াম করা বন্ধ করে দেয়। কারণ, তাঁরা প্রথম থেকে শুনে আসছেন, এই দিনগুলিতে ব্যায়াম (Exercise) করা উচিত নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা এ সম্পর্কে কী বলছেন? জেনে নিন।
পিরিয়ডসের সময় ব্যায়াম করা উচিত কি? বিশেষজ্ঞের মতে, এটি একটি মিথ (Myth), যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। পিরিয়ডসের সময় ব্যায়াম করাই যায়, তবে মহিলাদের নিজেদের শরীরের ওপরও নির্ভর করে। যদি কারও বেশি ক্র্যাম্পস বা ব্যথা থাকে, তবে তাদের পিরিয়ডের প্রথম ১-২ দিন ব্যায়াম করা উচিত নয়, তার পরে যখন আরাম পাবেন তখন ব্যায়াম করতেই পারেন।
ডঃ ক্রিস্টোফার হলিগসওয়ার্থের মতে, পিরিয়ডের সময়কালটি হরমোনের পরিবর্তনের দিক থেকে খুবই কঠিন সময়। এই সময়ে, শরীরে প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন উভয়ের মাত্রা কমে যায়, যে কারণে শরীরে আরও ক্লান্তি দেখা দেয়। কিন্তু কারও যদি ক্লান্তি ও দুর্বলতা না থাকে, তাহলে তিনি হালকা ব্যায়াম করতেই পারেন।
পিরিয়ডসের সময়, মেজাজ প্রায়ই খিটখিটে থাকে, যদি কেউ সেই সময়ে ব্যায়াম করেন, তবে তার মেজাজও ঠিক থাকবে এবং সেই দিনগুলিতে চলা কিছু সাধারণ সমস্যাও চলে যেতে পারে। পিরিয়ডস শুরু হওয়ার পর প্রথম কয়েক দিনে কিছু লক্ষণ বোঝা যায়, যার মধ্যে ক্লান্তি, বিরক্তি, রাগ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। তাদের বলা হয় প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS)। এই লক্ষণগুলি ব্যায়াম করে হ্রাস করা যেতে পারে। এই উপসর্গগুলি কমাতে হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম করুন।
ব্যায়াম শরীরে প্রাকৃতিক এন্ডোরফিন হরমোন বাড়ায়, যা মেজাজের উন্নতি ঘটায় এবং সেই সময়ে PMS-এর উপসর্গ কমাতে পারে। এন্ডোরফিন প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারী। পিরিয়ডের সময় এই ব্যায়াম করলে এই হরমোন নিঃসৃত হয় এবং ব্যথা উপশম হয়। একটি গবেষণা অনুসারে, মাসিক চক্রের প্রথম ২ সপ্তাহে হরমোনের মাত্রা হ্রাসের কারণে শক্তি হ্রাস দেখা যায়। কেউ যদি সেই দিনগুলিতেও ব্যায়াম করে, তবে তারা শক্তিশালী বোধ করবে।
ব্যায়াম শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যা সরাসরি মস্তিষ্ককে লক্ষ্য করে। এতে মন ঠিক থাকে এবং আপনি হাসিখুশি থাকবেন। অনেক মহিলাদের পিরিয়ডের সময় খুবই ব্যথা হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হাঁটা, কিছু হালকা ব্যায়াম করাও এই লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
তাহলে কোন ব্যায়ামগুলি করবেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিরিয়ডের সময় হালকা ব্যায়াম করা উচিত। যোগব্যায়াম, হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, নাচও করতে পারেন, তবে ৩০ মিনিটই করুন, এর বেশি নয়। এছাড়াও, এমন ব্যায়াম করবেন না যাতে আপনার পা পেটের উপরে চলে যায়। ক্রাঞ্চ, সিট আপের মতো ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন।