শখে অনেকেই বাড়িতে অ্যাকোরিয়াম সাজিয়ে রঙিন মাছ পোষেন। মনরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক চাপ কাটাতে অ্যাকোরিয়ামের রঙিন মাছের খেলা অত্যন্ত কার্যকর! কিন্তু যে মাছের কথা আজ এই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সেটি বিত্তবান ব্যক্তিরা বা রঙিন মাছের কারবারিরা বাড়ির অ্যাকোরিয়ামে রাখেন সৌভাগ্য ফেরাতে বা ধরে রাখতে। যাঁরা জ্যোতিষ বা গ্রহরত্নে বিশ্বাস করেন, তাঁরা যেমন নীলা বা নীলকান্তমনির ভাগ্য ফেরানোর আশ্চর্য ক্ষমতায় বিশ্বাস করেন, তেমনই এই মাছের উপরেও তেমনই আস্থা রাখেন অনেকে।
ভাগ্য ফেরানোর বিশ্বাসে এশিয়ান আরোয়ানা (Asian Arowana) মাছের কদর বিশ্বজোড়া! এটিই হল বিশ্বের সবচেয়ে দামি ‘পোষ্য’ মাছ। এশিয়া, আমেরিকার বিত্তবান, ধনী ব্যক্তিদের ঘরের অ্যাকোরিয়ামে এই মাছ শোভা বাড়ায়। বছর দুয়েক আগে হংকংয়ের একটি নিলামে এশিয়ান আরোয়ানার (Asian Arowana) দর উঠেছিল প্রায় ৩ লক্ষ মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় হিসাব করলে যা প্রায় ২ কোটি ২১ লক্ষ টাকার সমান!
এশিয়ান আরোয়ানা (Asian Arowana) আসলে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মিঠে জলের মাছ। স্বাভাবিক মুক্ত জীবনে এই মাছ প্রায় তিন ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে! এটি অত্যন্ত ক্ষিপ্র শিকারি। আরোয়ানা মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম ওস্টিও গ্লোসিড। মৎস্যবিজ্ঞানীদের মতে, টারসিয়ারি যুগের শেষভাগ থেকে এই মাছের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। দক্ষিণ আমেরিকায়, আফ্রিকায়, অস্ট্রেলিয়ায় এর কিছু প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। তবে আরোয়ানার এশিয়াতেই সর্বাধিক প্রজাতিকে দেখতে পাওয়া যায়।
এই মাছের তুমুল চাহিদার জন্যই আরোয়ানার ব্যাপক চোরাকারবার হয় বিশ্বজুড়ে। ডাকাতি, খুনের ঘটনাও কম ঘটে না এই মাছের জন্য। চিনের বিত্তবান, ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে এই আরোয়ানা মাছ নিয়ে একটু বেশি রকম বাড়াবাড়ির খবর শোনা যায়। মাছের চোখ বা মুখ পছন্দ না হলে, এগুলির প্লাস্টিক সার্জারি পর্যন্ত করান এর মলাকরা। মাছের প্লাস্টিক সার্জারির খরচ পড়ে প্রায় আড়াই-তিন হাজার মার্কিন ডলার!
আটের দশকের আগে পর্যন্ত বিশ্বের বিরল মাছগুলির অন্যতম ছিল এই এশিয়ান আরোয়ানা (Asian Arowana)। তবে ভাগ্য ফেরানোর বিশ্বাসে ভর করে পরবর্তিতে ক্রমশ বাড়ে এই মাছের চাহিদা। তার পর আরোয়ানার প্রজনন শুরু হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। শুধু ঘরের শ্রীবৃদ্ধিতেই নয়, ধনসম্পত্তি বৃদ্ধির আশায় খোঁজ করে দেখতে পারেন এশিয়ান আরোয়ানা (Asian Arowana) মাছের।