Maha Shivratri 2022 শিবরাত্রি (Maha Shivratri 2022) এসেই গেল। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ধান ভানতে শিবের গীত। ধানভানার যত গান পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে শিবের গানের উল্লেখ খুব একটা পাওয়া যায় না। এমনই জানাচ্ছিলেন বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত গবেষক চন্দ্রা মুখোপাধ্যায়।
শিব (Shiva) লোকায়ত সমাজেরই অংশ। তাঁর (Shiva) গাত্রবর্ণ শ্যামল হওয়া সত্ত্বেও দেবলোকের প্রধান তিনের একজন হতে পেরেছিলেন তাঁর নিজস্ব ক্ষমতা ও প্রতিভার কারণেই। তিনি (Shiva) একদিকে প্রলয়ের দেবতা। আর একদিকে তিনি চারুকলার এক শ্রেষ্ঠ কলা নৃত্যের গুরু- নটরাজ। এই শিব (Shiva)-কে নিয়ে লোকসমাজে তাই প্রচুর গান। গম্ভীরা বা গাজনের গানে শিব (Shiva)-ই কেন্দ্রীয় চরিত্র। দেশকালের ছোটবড় নানা খবর যেমন তাঁকে জানানো হয়, তেমনই বাঁধা হয় নানা হাস্যরসের গান।
চন্দ্রা মুখোপাধ্যায় বলেন, "মেয়েদের নিজস্ব গানে শিবকে আমরা একেবারে ঘরোয়া ভাবে পাই। সেখানে শিব বাংলার জামাই। শুরু করা যাক শিবের বিয়ে থেকে। মল্লিকা রানি বীর এসেছিলেন ময়মনসিংহ থেকে; তিনি শুনিয়েছিলেন, বরবেশী শিবের গান-
"কী আনন্দ হিমালয়ে গিরি করে কন্যাদান
হলুদ মাখিয়া অঙ্গে শিবকে করায় স্নান।
শিবের গলায় হাড়ের মালা, পরিধানে বাগাম্বর,
বসিয়াছেন ত্রিপুরারি, হইয়ে বিয়ার বর।"
ধরুন মাথায় জটা, ভুঁড়ি-এই সব নিয়ে যে বর আসে, তাঁকে তো মেয়েদের পছন্দ হওয়ার কথা নয়। সীতাকুণ্ডু থেকে এসেছিলেন ঝর্না রায়, অর্চনা শর্মা; তাঁরা একেবারে সরাসরি সে কথাই জানান-
"এ জামাই তো একদম ভালা নয়, নয় রে,
ক্ষণে নাচে ক্ষণে গায়, ডম্বুরা বাজাইয়া রে,
এই জামাই তো একদম ভালা নয়।"
পছন্দ না হলেও বিয়ে আটকে থাকে না। পুরাণে বা অন্য জায়গায় উমার ব্যাপারে আমরা যা জেনেছি, তা হল তিনি বিয়ের সময় বয়সে যুবতী। কিন্তু বাংলায় নানা কারণে গৌরীদানের প্রথা শুরু হয়েছিল। আর চলেও ছিল দীর্ঘদিন সমাজের এক অংশে। খুবই ছোট বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হত মেয়েদের। সুবর্ণের চর থেকে আসা গীতা দেবনাথ শুনিয়েছিলেন তেমনই একটি গান-
"কুলে বসি দুগ্ধ খায়,
মায়ের গলায় গো জড়ায় উমা নিদ্রা যায়। দুগ্ধের উমায় শিবে লইয়া যায়,
রথে চড়ি উমা যায়
মায়ের দিগে উমা ফিরা ফিরা চায়।"
মায়ের উতলা মন খবর নেন, মেয়ে গৌরী কেমন আছে। প্রথম প্রথম, ভালই আসে খবর। পরে অবশ্য চিত্রটা পাল্টে যায়। শোনা যায়-
"ঘরে নেই চাউল তার/
ঘর পড়ে জল পড়ে তার..
১২ খান ঢেঁকি ১৩ খান কুলা,
কেবল ভাঙে ভাঙ্গের গুড়া,
এই সুখেতে আছে গৌরী পাগলের ঘরে।"
আবার অন্য ধরনের খবরও কোথাও কোথাও পাওয়া যায়। মেচপাড়ায় শিব ঘুরে বেড়াচ্ছেন, মেচেনী রমণীর সঙ্গে। মেচেনী সেজে গৌরী গেলেন সেখানে-
"ছাতিটা গুয়া সাজাইয়া গৌরী গেলেন নাচিয়া, গৌরীদেবী দেখি ভোলা হলেক পাগলা।"
ফলে আবার হরগৌরীর মিলন। এই ভাবে দিন যায়। সংসারও বড় হয়। বছর শেষে একবার মা-বাবার কাছে যেতে হবে। একটা অনুমতি তো লাগেই-
"আইজ্ঞা করো পাগলা শিবো,
যাইতাম বাপের নাইওরে"
শিব সরাসরি কিছু না বলে বলছেন-
'আমারো না কার্তিক-গণো থুইয়া যাইয়ো পালঙ্গে।'
চন্দ্রা বলেন, "সিলেটের বীণাপাণি রায়চৌধুরীর কাছে এমন গান শুনেছি, যেখানে শিব সরাসরি বারণ করছেন।"
"বলিও তোমার পিতা আইলে নিষেধ করে শঙ্করে"
উমা এখন ছোটটি নন; তর্ক জোড়েন-
"মাসও না হয়,পক্ষ না হয়,
তিনদিবসের নাইওরে
তবুও তুমি নিষেধ করো
লজ্জা নাই কি অন্তরে,
শিব যাবই আমি পিতার নগরে-
কার্তিক গণেশ সঙ্গে মাতা দাঁড়াইলা সিংহপৃষ্ঠে
যাচ্ছি আমি বাপের বাড়ি না জিজ্ঞাসি তোমারে।"
গৌরীকে ছেড়ে শিব তো থাকতেও পারেন না বেশিদিন। তিনদিন কাটতে না কাটতেই তিনি সোজা হাজির-
"এগো গৌরী নিতে অকস্মাৎ
আইজ ক্যানে গো আইলো ভুলানাথ
গিরিপুরের যত নারী কাইনছে মাথে দিয়া হাত।"
গৌরীকে ফিরে যেতে হয়। শিবদুর্গার সংসার এভাবেই চলতে থাকে, বাংলার মেয়েদের নিজস্ব গানের সুরে সুরে।
আরও পড়ুন: ব্যাঙ্কের থেকে বেশি সুদ, পোস্ট অফিসের এই স্কিমে রাখুন ১ হাজার টাকা
আরও পড়ুন: এই ৫ TATA শেয়ার ২ হাজার শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে, দেখুন কোনগুলি