এ বছর দিল্লি সহ গোটা উত্তর ভারত ঐতিহাসিক তাপপ্রবাহের সম্মুখীন। চলতি সপ্তাহে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ থেকে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও শিগগিরই ফের ফিরতে চলেছে প্রচণ্ড তাপদাহ। এদিকে দিল্লিতে বিয়ার সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও এই ঘাটতি বিয়ারপ্রেমীদের অসুবিধায় পড়তে বাধ্য করছে।
আসলে, ক্রমবর্ধমান গ্রীষ্মের কারণে, দিল্লির পাশাপাশি প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতেও বিয়ারের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে প্রতিবেশী রাজ্য থেকে দিল্লিতে কম সরবরাহ দিতে আসছে। পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা বলছেন যে গত বছরের নভেম্বরে নতুন আবগারি নীতি কার্যকর হওয়ার পরে, বেসরকারি খুচরো বিক্রেতারা গ্রাহকদের জন্য দুর্দান্ত অফার দিচ্ছে। এ কারণে বিয়ারসহ সব ধরনের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের চাহিদা বেড়েছে। বিয়ারের স্বল্পতার পেছনে এটিও একটি কারণ।
ভারতীয় অ্যালকোহলিক বেভারেজ কোম্পানির ডায়রেক্টর বিনোদ গিরি বলেছেন যে দিল্লিতে বিয়ারের ঘাটতির অনেক কারণ রয়েছে৷ প্রথম কারণ হল এবার গ্রীষ্ম তাড়াতাড়ি এসেছে। দ্বিতীয় বড় কারণ হল নির্মাতাদের প্রতিবেশী রাজ্য যেমন রাজস্থান, হরিয়ানা এবং পঞ্জাবে প্রথমে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে বলেছে। এই কারণে, এই নির্মাতারা দিল্লি এবং অন্যান্য বাজারে সরবরাহ করার আগে স্থানীয় বাজারে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করছে।
আবগারি দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকালে দিল্লিতে প্রতিবারই বিয়ারের ঘাটতি থাকে। এবার উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য থেকে সরবরাহ কম হওয়ায় পরিস্থিতি আরও গুরুতর। তিনি বলেন, 'দেশের উত্তরাঞ্চলে এ মপসুমে বিয়ারের চাহিদা বাড়ে। দিল্লিতে কোনও উত্পাদন সুবিধা নেই। এই কারণে গ্রীষ্মে চাহিদা বাড়লে দিল্লিকে ঘাটতির মুখোমুখি হতে হয়, কারণ স্থানীয় চাহিদা মেটানো সংস্থাগুলিরও দায়িত্ব রয়েছে।
গিরি জানান, চলতি বছরের মার্চেই বিয়ারের চাহিদা বেড়েছে ৩০ শতাংশ। “সাধারণত, খুচরা বিক্রেতারা মার্চ মাসে বিয়ার মজুদ করে এবং এপ্রিল, মে, জুনের মতো গরম মাসে এটি খাওয়া হয়। তবে এবার মার্চেই চাহিদা বাড়তে শুরু করায় তারা পর্যাপ্ত মজুদ সংগ্রহ করতে পারেননি।
এদিকে কলকাতা শহরেও এই গরমে গলা ভেজাতে চাহিদা বাড়ছে বিয়ারের। কিন্তু জোগান সে অর্থে অনেকটাই কম। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে উৎপাদন সময়মতো শুরু হয়নি। যার ফলে এবার বাজারে সে অর্থে মিলছে না বিয়ার। আর তাই এবার বিয়ার সরবরাহের ক্ষেত্রে রেশন ব্যবস্থা চালু করেছে রাজ্যের আবগারি দফতর।
আবগারি দফতর সূত্রে খবর, গত ৮ এপ্রিল থেকে বিয়ারের ‘রেশন’ ব্যবস্থা চালু হয়েছে রাজ্যে। ২০২১ সালের বিক্রির পরিমাণ অনুযায়ী বিক্রেতাদের ‘র্যাঙ্কিং’ দেওয়া হয়েছে। সেই ‘র্যাঙ্কিং’ অনুযায়ী বরাদ্দ হচ্ছে বিয়ার। ‘র্যাঙ্কিং’ শুরু হয়েছে ০.০১ থেকে। ০.০১ ‘র্যাঙ্কিং’ যে দোকানের, সেই দোকান সপ্তাহে ৫ কেস করে বিয়ার যাবে। ০.০২ হলে সপ্তাহে ১০ কেস। এইভাবে দোকানগুলিতে বিয়ার বণ্টন করা হবে। প্রসঙ্গত, একটি কেসে ৩৩০ মিলিলিটারের বিয়ারের ২৪টি বোতল থাকে। ৫০০ মিলিলিটারের বোতল হলে ২০টি এবং ৬৫০ মিলিলিটারের ক্যান হলে এক কেসে ১২টি থাকে। অবশ্য ওই দোকানগুলি কোন ধরনের বিয়ার নেবে তা তাদের সিদ্ধান্ত।
এই গরমে শহরে বিয়ার সংকটের মধ্যেই বিয়ার বিক্রিতে সর্বকালীন রেকর্ড গড়ছে রাজ্যে। ইতিমধ্যেই গরমে বিয়ারের বাম্পারের সেল হয়েছে রাজ্যে। মূলত জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিক্রেতারা। চিত্র প্রায় সব কাউন্টারের একই। কোথাও ঝুলছে “বিয়ার নেই” সাইনবোর্ড আবার কোথাও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। জানা যাচ্ছে, প্রতিবছর গরমে পশ্চিমবঙ্গে গড়ে ১০ লক্ষ বিয়ারের কেস বিক্রি হয় । একটি কেসে ২০ বোতল বিয়ার থাকে । তবে এবার দিনে গড়ে ২০ লক্ষ কেস বিয়ার বিক্রি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। যার জেরে গত দু’মাসে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা আয় করেছে রাজ্য।
এই মুহুর্তে বিয়ারের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। তার জেরেই ইতিমধ্যে বিয়ারের জোগান দিতে তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। এ বিষয়ে আবগারি দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে , রাজ্যে বিয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটগুলির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।বর্তমানে রাজ্যে একাধিক ডোমেস্টিক বিয়ার তৈরির ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট রয়েছে। গত দু-মাসের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের যে যোগান রয়েছে, তার তুলনায় অধিক চাহিদা আছে। তার জেরেই একাধিক ব্র্যান্ডের বিয়ার প্রস্তুতকারক সংস্থা ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের এক্সপানশন করার কথা ভাবা হচ্ছে। এর জেরেই মূলত কর্মসংস্থান বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।