বহু প্রতীক্ষার অবসান। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে খুশি কলকাতা। সড়কপথে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দূরত্ব কমছে ঢাকার সঙ্গে কলকাতার। যাত্রাপথ অনেক কমে যাওয়ায় পর্যটন এবং বাণিজ্য দুটি ক্ষেত্রেই সুবিধা হবে। খুশি দুই বাংলাই।
বিশেষ করে বিদেশি সাহায্য ছাড়াই বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার, শ্রমিক কর্মীদের দানে যেভাবে ৩০ হাজার কোটি টাকায় প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সম্পন্ন এই সেতুটি নির্মাণ করেছে তার প্রশংসা ছড়িয়েছে সর্বত্র।
এই সেতু উদ্বোধনের ফলে কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব দেড়শো কিলোমিটার কমছে। আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী থেকে ওপার বাংলার রাজধানী ঢাকাতে পৌঁছতে ৪০০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হতো। এখন পাড়ি দিতে হবে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার গেলেই চলবে।
সেতুটির সাজসজ্জার কাজ এর মধ্যেই প্রায় শেষের মুখে। সেতুতে সাধারণ আলোর ব্যবস্থা ছাড়াও থাকছে ‘আর্কিটেকচারাল লাইটিং’। সেতুর সৌন্দর্যায়নের জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি সংগ্রহশালাও। তাতে পদ্মা সেতু তৈরির বিভিন্ন উপকরণ প্রদর্শন করা হবে।
৬ কিলোমিটারের বেশি লম্বা এই সেতু দোতলা। উপরতলায় চলবে বাস এবং যানবাহন। নীচে চলবে ট্রেন। আপাতত সড়কপথ চালু করা হচ্ছে। সেতুতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, আগামী বছর ওই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
বাংলাদেশের নিজের টাকায় করা হয়েছে এই সেতু। বিশ্বব্যাঙ্ক সহ একাধিক সংস্থা টাকা দেবে বলেও পিছিয়ে যায়। ২০০৮ সালে এই সেতুর নকশা করা হয়। প্রথমে বলা হয়েছিল এই জন্য খরচ হবে ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। পরে কয়েক দফায় বাজেট পাল্টানো হয়। সবশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।
২০১৪ সালে ২৬ নভেম্বর কাজ শুরু হয়। ঠিক ছিল ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ওই কাজ শেষ হবে। পরে কয়েক ধাপে সময় বাড়ানো হয়। অবশেষে ২০২২ সালে তা শেষ করে যাতায়াত শুরু করে দেওয়া হলো।
দোতলা পদ্মা সেতু করা হয়েছে কংক্রিট ও স্টিল মিশিয়ে।পদ্মা সেতুর মূল দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। দুপাশে সংযোগকারী রাস্তা ১৪ কিলোমটার। পদ্মা সেতুর প্রস্থ ৭২ ফুট। এতে থাকছে চারলেনের সড়ক। মাঝখানে রোড ডিভাইডার। তাতে ভায়াডাক্ট পিলার আছে ৮১টি । পদ্মানদীতে যাতে বড় লঞ্চ চলাচলে সমস্যা না হয় তার জন্য জল থেকে ৬০ ফুট উঁচুতে করা হয়েছে এই সেতু। এতে মোট পিলার আছে ৪২টি এবং পাইলিং আছে ২৮৬টি।
পদ্মা সেতুর ফলে যাতায়াতের অনেকটা সুবিধা হবে। কলকাতা থেকে বাসে ঢাকায় আসতে হলে কিছু দিন আগে পর্যন্ত পদ্মা পার হতে স্টিমারের প্রয়োজন হত। পদ্মা সেতু চালু হলে সড়কপথেই সরাসরি ঢাকায় পৌঁছনো যাবে। কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যাবে।
আগে কলকাতা থেকে ঢাকা, ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগত ১০ ঘণ্টা। এখন তা মোটামুটি চার ঘণ্টায় হয়ে যাবে। আর রেলপথে পৌঁছতে সময় লাগবে মোটামুটি সাড়ে ছ’ঘণ্টা। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই শেখ হাসিনা ভারত সফরে যেতে পারেন এই পদ্মা সেতু দিয়েই।
শুধু যে কলকাতা-ঢাকার দূরত্ব কমাবে তাই নয়, পদ্মা সেতুর ফলে বঙ্গোপসাগর তীরের মংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব একশো কিলোমিটার কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট বন্দর দু’টিকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
ফলে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ সুগম হবে। দুই দেশই আশা করছে, শেখ হাসিনার সফরের আগেই ভারত-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। পদ্মা সেতু দু’দেশের বাণিজ্যেও নতুন সেতুবন্ধন করবে।
প্রথম যাত্রী হিসেবে পদ্মাসেতু উদ্বোধন করে তাতে গাড়িতে চেপে পাড়ি দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি রীতিমতো টোলট্যাক্স দিয়েই সেতু পার হন। এরপর শুরু হয়ে যায় উৎসব। শুক্রবার মাঝরাতেই অনেকে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন সেতু উদ্বোধন দেখতে। এদিন দিনভর উৎসব পালন করা হয়ে ও দেশের মানুষের তরফে।