Indian Railways Rules: ভারতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করেন। কিন্তু খুব কম যাত্রীই জানেন যে ১৯৮৯ সালের রেলওয়ে আইন অনুসারে, এমন অনেক ভুল রয়েছে যা করলে কেবল ভারী জরিমানাই হয় না বরং সরাসরি কারাদণ্ডও হতে পারে। প্রায়শই, মানুষ, অজান্তে বা 'সবাই এটা করে' ভেবে এমন ভুল করে যা যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয়। রেলওয়ে স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছে, ট্রেনে দুর্ব্যবহার, নিয়ম ভঙ্গ করা বা নিরাপত্তা নিয়ে খেলা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
জরুরি অবস্থা ছাড়াই ট্রেনের চেইন টানা
রেলওয়ে আইনের ১৪১ ধারা অনুসারে, অপ্রয়োজনীয়ভাবে চেইন টানা একটি অপরাধ। এটি ট্রেনের নিরাপত্তা, সময় এবং পরিচালনার উপর প্রভাব ফেলে। এই অপরাধের জন্য এক বছর পর্যন্ত জেল, জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
বৈদ্যুতিক কেটলি, হিটার, ইন্ডাকশন, রডের মতো যন্ত্রপাতি অপারেটিং
এসি কোচের মোবাইল চার্জিং পয়েন্টে বৈদ্যুতিক কেটলি লাগানো, ইন্ডাকশনে রান্না করা, অথবা হিটিং রড ব্যবহার করা রেলওয়ে কর্তৃক 'অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি' হিসেবে বিবেচিত। এটি রেলওয়ে আইনের ১৬৪ এবং ১৬৫ ধারার অধীনে একটি অপরাধ এবং এর ফলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
চলন্ত ট্রেনে ওঠা বা নামা
মানুষ প্রায়ই চলন্ত ট্রেন ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু এটিকে 'অযত্ন এবং অবহেলার কাজ' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রেলওয়ে আইনের ১৫৬ ধারায় বলা হয়েছে যে এর ফলে ছয় মাসের জেল অথবা ১০০০ টাকা জরিমানা হতে পারে। যদি এর ফলে অন্য কারA আঘাত বা ক্ষতি হয়, তাহলে বিষয়টি আরও গুরুতর হয়ে ওঠে।
ট্রেনে ধূমপান
রেলওয়ে আইনের ১৬৭ ধারা অনুযায়ী ধূমপান অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এসি কোচে সিগারেট জ্বালালে তাৎক্ষণিক জরিমানা এমনকি গ্রেফতারিও হতে পারে। বারবার অপরাধ করলে কারাদণ্ডও হতে পারে।
রেললাইন, ইয়ার্ড বা সীমাবদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করা
১৪৭ ধারা অনুযায়ী, রেলওয়ের সম্পত্তিতে প্রবেশ করা 'অনুপ্রবেশ' অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। যাত্রীদের প্রবেশের অনুমতি নেই এমন কোনও রেলওয়ের সম্পত্তিতে প্রবেশ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড, জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। মানুষ প্রায়ই ছবি তোলা বা ভিডিও করার জন্য রেললাইনে উঠে যায়, কিন্তু এটি সরাসরি শাস্তিযোগ্য।
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ট্রেনে হট্টগোল সৃষ্টি করা
ধারা ১৪৫ অনুসারে মদ্যপ অবস্থায় যাত্রীদের মধ্যে ঝামেলা, ঝগড়া বা বিরক্ত করা অপরাধ। এটি সবচেয়ে সাধারণ অপরাধগুলির মধ্যে একটি এবং এর ফলে রেলওয়ে পুলিশ সরাসরি গ্রেফতার করতে পারে। এর শাস্তি ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা।
ট্রেনে দাহ্য জিনিসপত্র নিয়ে ভ্রমণ
গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল, কেরোসিন, আতশবাজি ইত্যাদি নিয়ে ভ্রমণ করা ১৬৪ ধারার অধীনে একটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধের ফলে কারাদণ্ড এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা হতে পারে। এই ভুলটি পুরো ট্রেনের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
রেলওয়ে স্টেশন বা ট্রেনের ক্ষতি করা
সিট কুশন ছিঁড়ে ফেলা, চাদর/বালিশ চুরি করা, ওয়াশবেসিনের ট্যাপ ভাঙা, অথবা লাইট/ফ্যান ভাঙা রেলওয়ের সম্পত্তির চুরি বা ক্ষতি বলে বিবেচিত হয়। রেলওয়ে সম্পত্তি (বেআইনি দখল) আইনের অধীনে, এর ফলে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
মহিলা যাত্রীদের হয়রানি করা বা দুর্ব্যবহার
ট্রেনে বা স্টেশনে কোনও মহিলার হয়রানি কেবল রেলওয়ে আইনের অধীনেই নয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনেও জামিন অযোগ্য অপরাধ। এতে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এই বিষয়ে রেলওয়ে 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণ করে।
এমারজেন্সি গেট, সিগন্যাল, ট্র্যাক বা সরঞ্জামে হস্তক্ষেপ করা
এটি রেলওয়ে আইনের সবচেয়ে গুরুতর বিভাগের মধ্যে পড়ে। এই আইনের ১৫০ এবং ১৫২ ধারা, যেমন ট্র্যাক খোলা, সিগন্যাল ত্রুটিপূর্ণ করা, বা ট্র্যাক বাধাগ্রস্ত করা, 'ভ্রমণকে বিপজ্জনক করে তোলা' এর অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। এই অপরাধ কেবল একজন ব্যক্তিকেই নয়, পুরো ট্রেনকেই বিপন্ন করতে পারে।