শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এখন করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। তবে এবার মানব শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে ড্রাগন ফল। গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে এখন বিভিন্ন জেলায় চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফলের।
করোনার এই আবহে গত মার্চ মাস থেকে এই পর্যন্ত এক ঝটকায় এই ফলের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। অন্যদিকে লাভের মুখ দেখছে শিলিগুড়ি মহকুমা ড্রাগন ফল চাষিরা। অন্যদিকে এই ফলের চাষ দিশা দেখাচ্ছে নতুন কর্মসংস্থানের।
ড্রাগন ফ্রুটের উপকারিতা সম্পর্কে এখন অনেকেই অবগত। এই ফল প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। দাম দিয়ে বাজার থেকে ড্রাগন ফ্রুট না কিনে বাড়িতে টবেই চাষ করতে পারেন ড্রাগন ফ্রুট! মাত্র ১৮ মাসের গাছ থেকেই ফল ধরতে শুরু করবে।
ড্রাগন ফ্রুটের গাছ মূলত ক্যাকটাস গোত্রের। নাম শুনে এটিকে চিনা ফল মনে হলেও, এটির আদি নিবাস মেক্সিকোয়। এই জাতিয় গাছের পরিচর্যার বিশেষ ঝক্কি নেই বললেই চলে! খরচও কম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সব ধরনের পরিবেশেই এই গাছের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে। তাই বাড়ির ছাদে বা ব্যালকনিতে বড় মাপের টবে এই গাছ লাগানো যেতেই পারে।
মোটামুটি সারা বছর ধরেই ড্রাগন ফ্রুট চাষ করা যায়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়টা ড্রাগন ফ্রুটের চারা বসানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। প্রথম বার একটি গাছ থেকে মোটামুটি ১৮-২০টি ফল পাওয়া যায়। দু-তিন বছর পর থেকে গাছে ফলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক বার এই গাছ লাগালে টানা ২০-২৫ বছর ফল পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টবে ড্রাগন ফ্রুট চাষ করতে হলে মোটামুটি ১৬-১৮ ইঞ্চির টব, এক ভাগ দোঁয়াশ মাটি, এক ভাগ বালি ও এক ভাগ পাতাপচা সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট দিয়ে মাটির মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এই গাছে জল খুবই কম লাগে। রাসায়নিক সার ছাড়াও এই ড্রাগন ফ্রুট চাষ করা যায়।
টবে জল নিকাশি ব্যবস্থা ভাল রাখতে হলে নারকেলের ছোবড়া বা খোসার গুঁড়ো ব্যবহার করা যেতে পারে। টবের ঠিক মাঝখানে অন্তত তিন ইঞ্চির গভীরতায় একটি করে ড্রাগন ফ্রুটের চারা বসাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, গাছের গোড়ায় যেন জল না থাকে! তাহলে গাছ নষ্ট হয়ে যাবে।
নার্সারি থেকে দেখে ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা চারা বসাতে পারলে ভাল হয়। এই গাছের বেড়ে ওঠার জন্য শক্ত অবলম্বনের প্রয়োজন হয়। তাই টবের মাঝখানে একটি শক্ত পাইপ বা ফুট দুয়েক লম্বা লাঠির টুকরো বসিয়ে দিতে পারলে ভাল হয়। গাছ খানিকটা বেড়ে উঠলে দড়ি দিয়ে ওই পাইপ বা লাঠির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে।
অনেক সময় গাছে বাদামি দাগ দেখা যায়। সময় মতো ব্যবস্থা নিতে না পারলে গাছ শুকিয়ে মরে যাতে পারে। তাই মাঝেমধ্যে গাছের গোড়ায় সর্ষের খোল পচিয়ে দেওয়া যেতে পারে। নিমের নির্যাস বা নিমখোলও এ ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী! এতেও কাজ না দিলে ম্যালাথিয়ন বা সাইপারমেথ্রিন প্রয়োগ করে দেখুন, সুফল মিলবে।