কিংকোবরার বিষাক্ত ছোবলে পূর্ণ বয়স্ক হাতি মৃত্যুর পর এবার এক পূর্ণ বয়স্ক গন্ডারের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশায় জলদাপাড়া বনদপ্তর।
শনিবার সকালে নদীর জলে ভেসে আসা এক পূর্ণবয়স্ক গন্ডারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে জলদাপাড়ায়।
মৃত গন্ডারটির দেহ জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে তোর্ষা নদীর জলে ভেসে আসে, আলিপুরদুয়ার এক নম্বর ব্লকের পাতলাখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শিমলাবাড়িতে।
স্থানীয় বাসিন্দারা গণ্ডারটিকে নদীতে জলে ভাসতে দেখে বনদপ্তরে খবর দেয়। খবর পেয়ে জাতীঁয় উদ্যানের চিলাপাতা রেঞ্জের কর্মীরা গিয়ে পে-লোডার দিয়ে নদী থেকে মৃত গণ্ডারের প্রকাণ্ড দেহটি তোলে।
নদীর জলে গণ্ডারের প্রকাণ্ড দেহ ভাসতে দেখে এলাকায় হইচই পড়ে যায়। সাত সকালে গণ্ডার দেখতে শিমলাবাড়ি এলাকায় প্রচুর মানুষ ভিড় জমান।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও দীপক এম বলেন, গণ্ডারটির খর্গ অক্ষতই আছে। মৃত গণ্ডারটির শরীরেও কোথাও জখমের চিহ্ন নেই।
আমাদের প্রাথমিক অনুমান জলে ডুবেই গণ্ডারটির মৃত্যু হয়েছে। গন্ডারটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে গন্ডারের দেহটি ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই প্রাণীটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, ওই শিমলাবাড়ি এলাকাতেই ২০০৯ সালে একটি পূর্ণবয়স্ক মৃত গণ্ডারের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। ময়নাতদন্তে প্রমাণিত হয় ২০০৯ সালে মৃত সেই গণ্ডারটিকে গুলি করে হত্যা করেছিল চোরাশিকারীরা।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল চিলাপাতা রেঞ্জের মেন্দাবাড়ির জঙ্গলেও একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী গণ্ডারকে গুলি করে হত্যা করেছিল চোরাশিকারীরা।
পরে মেন্দাবাড়ির জঙ্গলে মৃত সেই স্ত্রী গণ্ডারটির শৃঙ্গ কেটে নিয়ে চম্পট দেয় চোরাশিকারীরা। মেন্দাবাড়িতে ওই গণ্ডার হত্যার ঘটনার তদন্তে নেমে বনদপ্তর পাঁচ জনকে গ্রেপ্তারও করে।
ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় দু’টি রাইফেল ও তাজা কার্তুজও। যদিও মৃত গণ্ডারটির শৃঙ্গ আজও উদ্ধার হয়নি। সেটি পাচার হয়ে গিয়েছে বলে অনুমান বনাধিকারিকদের।
সম্প্রতি আলিপুরদুয়ারের সোনাপুরের মথুরা মোড়েও নাকা চেকিং তল্লাশির সময় পুলিশ অবিকল গণ্ডারের শৃঙ্গের মতো দেখতে বন্যপ্রাণীর একটি দেহাংশ সহ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে।
সেটি আসলে কি, তা নিয়েও কোনও সদর্থক সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি বিশেষজ্ঞরাও। সেটি খড়্গ না অন্য কিছু এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে।
ধৃত দুই যুবকেরই বাড়ি কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়ি এলাকায়। সোনাপুর ফাঁড়ির পুলিশ বন্যপ্রাণী আইনে মামলা করে ধৃতদের আদালতেও পাঠিয়েছিল। বর্তমানে দুই অভিযুক্ত আলিপুরদুয়ারে সংশোধনাগারে রয়েছে।
একের পর এক দেহাংশ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বন দফতরের কড়াকড়ি সত্ত্বেও কোথায় গাফিলতি থেকে যাচ্ছে বুঝে উঠতে পারছেন না বনকর্তারা।