কমলালেবু দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। কিন্তু দেশের মধ্যে স্বাদে ও গন্ধে সেরা কমলালেবু এ রাজ্য়েরই দার্জিলিংয়ে মেলে। আমাদের চিরচেনা অথচ গর্বের দার্জিলিংয়ে কমলালেবুর মান অত্যন্ত ভালো।
কিন্তু দার্জিলিংয়ের সেই কমলাই এখন ফলন কমতে কমতে যেন হারিয়ে যাচ্ছে। বাজারে গেলেই আর মিলছে না শৈলশহরের সেই আকর্ষণীয় কমলালেবু। তার জায়গায় কখনও পঞ্জাবের কিন্নো, নাগপুর কিংবা ভুটানের স্বাদহীন কমলালেবু বাজার কাঁপাচ্ছে।
আকারে ছোট, কিন্তু স্বাদে মিষ্টি। আর মিষ্টির পাশাপাশি লেবুর একটা ইউনিক স্বাদ মেলে দার্জিলিংয়ের কমলালেবুতে। আর মুখে দিলেই বোঝা যাবে তা দার্জিলিংয়ের কমলা।
পর্যটন ব্যবসার পাশাপাশি পাহাড়বাসীর আয়ের অন্যতম উৎস কমলা চাষ। কিন্তু, খারাপ আবহাওয়া, গাছে ও ফলে রোগ পোকার আক্রমণ, গাছের বয়স হয়ে যাওয়া প্রভৃতি নানা কারণে দার্জিলিং পাহাড়ে সেই কমলালেবুর চাষ কয়েক বছর ধরে কমছে। নতুন করে বাগিচা তৈরি না হওয়ায় পুরনো গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উন্নতমানের ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চাষের এলাকা কমে যাওয়ায় দার্জিলিংয়ে কমলালেবুর উৎপাদন কমছে।
দার্জিলিংয়ের তাকদা, সিটং, বিজনবাড়ি, চুংথাং, সিংথাম, সিংলা ও বাদামতাম, কার্শিয়ং এলাকায় কমলালেবুর চাষ হয়ে আসছে। কিন্তু, কয়েক বছর ধরেই ওসব বাগানে কমলালেবুর চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খারাপ আবহাওয়া ও নানা রোগ ব্যাধির কারণে আর এসব এলাকায় কমলার চাষ হচ্ছে না।
দার্জিলিংয়ের সুখিয়াপোখরি ব্লকের মিরিক, পোখরিটাং, মংপুতেও কিছু কমলালেবুর চাষের এলাকা আছে। কিন্তু, সেখানেও কমলালেবু চাষের পরিমাণ অনেক কম।
খারাপ আবহাওয়া ও রোগ পোকার হানাদারিতে কমলালেবু চাষের খরচ বাড়ছে। ফলে চাষিদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। তাই হতাশ চাষিরা কাজের খোঁজে বাইরে চলে যাচ্ছেন।
ফলন বৃদ্ধির জন্য কাজ শুরু করেছে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৷ রোগ পোকার আক্রমণ, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও ভাইরাসের দাপটে দার্জিলিঙের কমলালেবুর গুণগত মান কমছে ৷ এ ছাড়া বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ না করা এবং নতুন গাছ রোপণ না করার জন্যও ফলন কমছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে উদ্যানপালন আধিকারিক ও পাহাড়ের কমলালেবু বিশেষজ্ঞরা ৷
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে সমস্যা মেটাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । কেন্দ্রের তরফে এনিয়ে একটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে ৷ এই প্রকল্পে পাহাড়ের কমলালেবু চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ৷
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বীজ থেকে চারা তৈরি ও গাছের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা সবকিছুই এই প্রকল্পে শেখানো হবে ৷’ এ বছর থেকেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানান ডঃ গুরুং । তাঁর আশা, আগামী দু’এক বছরের মধ্যেই আবার আগের জায়গা ফিরে পাবে দার্জিলিংয়ের কমলালেবু।