বর্ষা মরশুমে মালদা জেলার একাধীক রাস্তা বেহাল। এবার সেই বেহাল রাস্তা নিয়ে গান বাঁধলেন জেলার বিখ্যাত লোক সংস্কৃতি গম্ভিরা দল। আর সেই গান ভাইরাল হল সোস্যাল সাইটে। মালদা জেলার অন্যতম লোকসংস্কৃতি গম্ভীরা পালা গান।প্রাচীনকালে সামাজিক সচেতনতা মাধ্যম হিসেবে এই গম্ভীরা লোকসংস্কৃতির যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। আর সেই গম্ভীরা গানের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরা হতো। হিন্দু ধর্মে মহাদেবকে সর্বসেরা হিসেবে ধরা হয়।
তাই গম্ভীরা গানের মহাদেবকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে নানা-র(সমাজের প্রধান) কাছে অভিযোগ করা হতো। সমস্যা প্রতিকারের আর্জি জানানো হতো। কালের পরিবর্তনের ফলে গম্ভীরা গানের বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
স্বাধীনতার পর সেই পালা গান সরকার বিরোধী হয়ে ওঠে।সেই সময় জনগণের প্রতিবাদের ভাষা হয়ে দাঁড়ায় এই গম্ভীরা। সেই গম্ভীরা গানকে এখন সরকারের প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর ঐতিহ্যবাহী মালদা জেলার বেহাল রাস্তার কথা ভেবে গম্ভীরা গান বাঁধলেন।
শিল্পীরা জানালেন ভাষা নিয়ে সরকারি প্রচার নয়, মূল লক্ষ্য হলো গম্ভীর এর মাধ্যমে জনসাধারণের কথা প্রকাশ্যে নিয়ে আসা। ফতেপুরের গম্ভীরা দল প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বেহাল রাস্তা নিয়ে গম্ভীরার পালা গান করেছে। সেই গম্ভীরা পালা গান ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল সাইট ফেসবুকে।
পাশাপাশি তার সঙ্গে তুলে ধরেছেন জেলার বিভিন্ন সমস্যার কথা।বর্তমানে এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মঞ্চ বেঁধে গান করার সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই কারণে রাজ্য সড়কের ও গ্রাম্য সড়কের বেহাল দশা কথা ভেবে গম্ভীরা গানের মাধ্যমে সোশ্যাল সাইটে গম্ভীরা শিল্পীরা তুলে ধরেছেন। জনসাধারণের মধ্যে এই গান ব্যাপক সাফল্য পেলেঔ। প্রশাসন রয়েছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে তা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে গম্ভীরার পালা গান। গম্ভীরা শিল্পীদের অভিযোগ বর্তমানে সমাজের সমস্যার কথা গম্ভীরা গানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। তার থেকে বেশি তুলে ধরা হয় সরকারের গুণগান। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রচার। গম্ভীরা শিল্পী বাবলু মন্ডল বলেন, জেলার গম্ভীরা শিল্পীরা সরকারি ভাতার আওতায় এসেছে। তাই সরকারের উন্নয়নমূলক গুণগান করতেই হবে।
আর এর ফলে গম্ভীরা গানের প্রাচীন ঐতিহ্য সেই কারণে নিশ্চিহ্নের মুখে চলে যাচ্ছে। গম্ভীরা গানের যে মূল উদ্দেশ্য সমাজের সমস্যার কথা তুলে ধরা সেটা আর এখন হয় না। তাই আমরা এখন থেকে গম্ভীরের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে সমাজের সমস্যার কথা আমাদের গম্ভীরা গানের মাধ্যমে তুলে ধরছি। সরকারি ভাতা আওতায় থাকার ফলে সরকারের বেঁধে দেওয়া কথাগুলো দিয়েই গান বাধতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এই দল একমাত্র ব্যতিক্রমী অর্থাৎ মালদার গম্ভীরা দল যারা প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
দলের আরেক সদস্য সমিত বসাক বলেন,মালদা জেলার প্রাচীন ঐতিহ্য লোকসংস্কৃতি গম্ভীরা গানকে ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করছি। বর্তমানে মালদার মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরছি। তাই আমরা নিজেদের মতো করে গম্ভীরা গান তুলে ধরছি। যেমন মালদার বর্তমানে যে বেহাল রাস্তা রয়েছে সেই রাস্তা নিয়ে গান ধরেছে। যার প্রচার হিসেবে আমরা সোশ্যাল সাইট ফেসবুকে ব্যবহার করেছি। যাতে মালদার প্রাচীন ঐতিহ্য লোকসংস্কৃতি গম্ভীরা গান হারিয়ে না যায়।