অবৈধ বালি, পাথর বোঝাই ওভার লোড করা ভুটান ডাম্পার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভারতের রাস্তায়। আলিপুরদুয়ার এক উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিককে এ প্রশ্ন করতেই যাঁরা বৈধভাবে বালি,পাথর ব্যবসা করছেন, সোজা ভুটান রাজার কাছে অভিযোগ জানানোর পথ বাতলে দিলেন।
যা শুনে ক্ষোভে ফুঁসছেন আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জেলার বালি-পাথর-মাটি, ট্রাক মালিক সমন্বয় সমিতির অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন নদী থেকে ভুটান নম্বরের ছয় চাকার ডাম্পার বালি, পাথর ওভারলোড করে রীতিমতো জেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ অমান্য করেই জেলার নদীগুলোতে অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে জেসিবি এবং আর্থমুভার। এর জেরে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নদীর বুকে খনন করে নদীর চরিত্র পালটে ফেলা হচ্ছে। ফলে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে নদীর চরিত্র বদলে যাবার কারণে যখন তখন নদী বাঁধে ধস নেমে আসছে। বিপদজনক ভাবে তৈরি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি।
কাদের মদতে ভুটানের ওভারলোড ডাম্পার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জেলার বুকে? কার মদতেই বা গ্রিন ট্রাইবুনালের আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নদীর বুকে চলছে অবাধ খনন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন এই চক্রের শেকড় অনেক গভীরে। শাসকদলের কলকাতার এক প্রভাবশালী নেতার মদতেই ভুটান ডাম্পারের রমরমা নদীমাতৃক এই জেলায়।
কলকাতার সেই রাঘববোয়ালের অঙ্গুলিহেলনে জেলার কিছু চুনোপুঁটি ভুটান ডাম্পার জেলায় প্রবেশ করাচ্ছে। এই কান্ডের সাথে যুক্ত রয়েছে জেলার কিছু উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক সহ জেলার কিছু ছোট, বড় নেতা।
ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা আলিপুরদুয়ার জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ৭২ টি নদী রয়েছে।এই নদী গুলো পাহাড় থেকে নেমে আসার সুবাদে সমস্ত নদীতেই বিপুল পরিমাণে উৎকৃষ্ট মানের বালি,পাথর পাওয়া যায়। জেলার নদী গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রায়ডাক-১,২, সংকোশ, বাসরা,পানা,নিমতি তোর্ষা সহ অন্যান্য নদী।
আলিপুরদুয়ার কোচবিহার জেলা বালি,পাথর মাটি, ট্রাক মালিক সমন্বয় সমিতির সভাপতি দিবাকর পাল বলেন, আমরা আজ অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপারকে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন। ভুটান ডাম্পারের কথা বলতেই তিনি আমাদের ভুটান রাজার কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাতে বলেন।
দিবাকর পাল বলেন, ভুটান ডাম্পারের জন্য জেলার প্রায় তিন হাজার গাড়ি এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ। এই কাজের সাথে জেলার দুই লাখ মানুষের রুটিরুজি কর্মসংস্থান জড়িত। তাঁর দাবি, ভুটান ডাম্পার বন্ধের দাবিতে আমরা জেলা শাসক এবং পরিবহণ দফতরের দ্বারস্থ হয়েছি। ভুটান ডাম্পার বন্ধ না হলে আমরা আরো বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হবো।
আলিপুরদুয়ার জেলা পরিবহণ আধিকারিক প্রবীণ লামা বলেন, আমরা সবসময় ভুটান ডাম্পার এবং ওভারলোড গাড়িগুলোকে ধরতে অভিযান করি। এই ডাম্পার গুলো ধরতে পুলিশ, ল্যান্ড, প্রশাসন, পরিবহন দপ্তর মিলে একটা টাক্সফোর্স তৈরি করেছি। জেলা জুড়ে আমাদের অভিযান চলছে।
এই বিষয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সুপার ভোলানাথ পান্ডেকে ফোন করা হলে তার কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আলিপুরদুয়ার জেলা শাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা জানিয়েছেন ঘটনার কথা শুনেছি। এই বিষয়টা নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার এবং পরিবহন দপ্তরের আধিকারিকের সাথে কথা বলবো।