ফেলনা, তবু ফেলার নয়। সত্যিই তাই। ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে নানা রকম জিনিস বানিয়ে, ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মালদার সুবীর সাহা।
আজব তাহার দেশলাই প্রেম। নানা রকম জিনিসে ভালবাসার কথা শুনেছি আমরা। কিন্তু তা বলে দেশলাই ! এটাও আবার কেউ জমায় !
এখন এই সামগ্রী দিয়েই তিনি গড়ে তুলছেন শিল্পের একটা পৃথক জনার। কাঠি, বাক্স, লেবেল দেশলাইয়ের যা পাচ্ছেন, তাই জমাচ্ছেন।
বিভিন্ন দেশের জাপান, রাশিয়া, ইতালি সহ আরও বিভিন্ন দেশের দেশলাইয়ের লেবেল জমিয়েছেন তিনি। ইচ্ছে ভবিষ্যতে সংগ্রহশালা করবেন।
বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০০১ রকমের দেশলাই বাক্স ও কাঠি নিয়ে এসে তাকে শুধু জমিয়ে রাখেন তাই নয়। সেগুলি দিয়ে নানা রকম জিনিস বানাচ্ছেন।
রবীন্দ্রনাথ থেকে গান্ধীজি, বিদ্যাসাগরের মতো মনীষী যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সাইকেল, নৌকা বা বিভিন্ন রকম সামগ্রী।
বানিয়েছেন দেবী দুর্গার প্রতিকৃতি, শ্রীকৃষ্ণ। সবই দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে। অন্য কিছু তিনি ব্যবাহর করেন না। কেন ?
জানালেন দেশলাই হারিয়ে যাচ্ছে। তার প্রতি কেমন একটা মায়া পড়ে গিয়েছে। তাই দেশলাই জমিয়েছেন। লাইটারের জমানায় দেশলাই প্রেম ভাবা যায় না।
সুবীরবাবু জানান, প্রত্যেক মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো তার পছন্দের জিনিস কে আঁকড়ে ধরে রাখা। ঠিক এমনটাই ঘটেছে মালদার সুবীরবাবুর জীবনে।
দেশলাইকে জীবন করে নেওয়া এও তো এক নেশা। আজীবন এই নেশাকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চান সুবীরবাবু। জানিয়ে দিলেন ইচ্ছের কথা।
পেশায় গ্রন্থাগারিক সুবীরবাবুর স্ত্রী ও মেয়ে ছোট থেকেই দেখে আসছেন তাঁর কাণ্ডকারখানা। প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও এখন নিজেরাও জড়িয়ে পড়েছেন এসবের মধ্যে।
মেয়ে জানালেন, বাবাকে অনেক সময় এখন সাহায্য করি। কখনও এঁকে দিই। কখনও আঠা লাগিয়ে দিই। সবাই মিলেই বাবার নেশায় জড়িয়ে পড়েছি।
সুবীরবাবুর দর্শন, কত সহজেই রাস্তায় বা যেখানে সেখানে আমরা ফেলে দিই খালি দেশলাই বাক্স। কিন্তু সেই বাক্সের গায়ে যে কত রকম নকশা, ছবি থাকে সেসব আমরা কখনও খেয়াল করি না।
তিনি একটা একটা করে দেশলাই জমিয়ে চলেছেন দীর্ঘ ৩০ বছর। দেশলাই বাক্সের মধ্যে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের দেশলাই রয়েছে তাঁর সংগ্রহে।
লকডাউনে প্রচুর সময় পেয়েছেন। তাই কাজও হয়েছে প্রচুর। সংগ্রহে বেড়েছে শিল্পের সংখ্যা। সংগ্রহশালা আর প্রদর্শনী করার ইচ্ছে রয়েছে।