অবহেলায় অযত্নে পড়ে রয়েছে প্রাচীন যুগের বিষ্ণু মূর্তি। দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরেই মালদা জেলার হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রঞ্জিতপুর গ্রামের ফাঁকা মাঠে পড়ে রয়েছে প্রাচীন এই মূর্তিটি।
একটি উঁচু ডিপির মধ্যে টমেটো চাষের সময় কৃষকের কোদালে লেগে উঠে এসেছিল প্রাচীন এই মূর্তিটি। প্রথমদিকে মূর্তিটিকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহ ছিল। মূর্তিটি উদ্ধারের সাথে সাথে শুরু হয়েছিল পূজা- অর্চনা। তারপর ধীরে ধীরে স্থানীয়রাও ভুলতে বসেছে এই মূর্তিটি কে।
বর্তমানে যে জমিতে মূর্তিটি পড়ে রয়েছে তার মালিক নিয়মিত সন্ধ্যায় পুজোর দেন মূর্তিটি। দীর্ঘ এক বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে মূর্তিটি পড়ে রয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মূর্তিটি উদ্ধার বা সংরক্ষণের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া শাখা অফিস রয়েছে মালদায়। এই দপ্তরের পক্ষ থেকেও এখনো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি মূর্তিটি সেখান থেকে উদ্ধার বা সংরক্ষণের বিষয়ে।
খোলা আকাশের নিচে এইভাবে মূর্তিটি অবহেলায় পড়ে থাকলে নষ্ট বা চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলার পুরাতত্ত্ববিদেরা।
রঞ্জিতপুর গ্রামের বাসিন্দা সুনীল মার্ডি তার নিজের জমিতে টমেটো চাষ করেছিলেন। টমেটো গাছের জন্য মাটি খুঁড়তে গিয়ে কোদালে লেগে উঠে আসে প্রাচীন এই মূর্তিটি।
তিনি বলেন, যখন মূর্তি উদ্ধার হয়েছিল সে সময় এখানে পুলিশ এসেছিল। মূর্তিটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা গ্রামের বাসিন্দারা মূর্তিটি নিয়ে যেতে দিইনি। তারপর থেকে এখানে এটি পুজো করা হয়।
মালদা জেলার পুরাতত্ত্ববিদেরা জানান, মূর্তিটি প্রায় অনুমানিক ৪০০ থেকে ৩০০ বছরের পুরনো। তাঁদের কথায় বাংলায় সেন ও পাল আমলের এই মূর্তিটি হতে পারে।
মালদা জেলার হবিবপুর ব্লকে পাল যুগের বৌদ্ধবিহার রয়েছে। সেই সময়কার এই মূর্তিটি এমনটাই ধারণা জেলার পুরাতত্ত্ববিদের। এই মূর্তিটি একটি খিলান। একই লাইনের মধ্যে বিষ্ণুর দশ অবতার দেখানো হয়েছে। তবে উদ্ধার হওয়া মূর্তিটি ছয়টি অবতার দৃশ্যমান। বাকি চারটি ভেঙে গিয়েছে।
প্রাচীন এই মূর্তিটি বহুমূল্য এবং এটি ইতিহাস সাক্ষী বহন করছে। তাই জেলার পুরাতত্ত্ববিদরা চাইছেন, জেলা প্রশাসন বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে দ্রুত মূর্তিটির সংরক্ষণ করা হোক।