দেশ জুড়ে যেমন বাড়ছে করোনা (Corona Virus) আক্রান্তের সংখ্যা, তেমনই বেড়ে চলেছে মৃত্যু হার। বিভিন্ন রাজ্যে জ্বলছে গণচিতা। কোথাও আবার করোনায় আক্রান্ত বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে যাচ্ছে ছেলে। এক দিকে যেমন এরকম হাড়হিম করা দৃশ্য সামনে আসছে। উল্টো দিকে আবার দেখা মিলছে কিছু মন ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনাও। তবে সেখানেও রয়েছে বাঁধা- বিপত্তি!
এই কঠিন সময়ে মানবিকভাবে এগিয়ে এসেছে শিলিগুড়ি শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বাড়ি থেকে শবদেহ শ্মশানে নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্য করছেন সংস্থার মহিলা সদস্যরা। তবে সেক্ষেত্রেও বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
বুধবার শিলিগুড়ির কিরণচন্দ্র শ্মশানঘাটে এক মৃতদেহ নিয়ে তাণ্ডব চালায় এলাকার কিছু যুবক। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টে হেনস্থার মুখে পড়তে হয় এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মহিলাদের। রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে প্রশাসনের সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন তাঁরা।
পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে বর্তমানে মহিলারাও পাল্লা দিয়ে পুরুষদের মতো সব কাজেই অংশগ্রহণ করছেন। ঠিক সেভাবেই মৃতদেহ দাহ থেকে সৎকার পর্যন্ত সমস্ত কাজেই এগিয়ে এসেছেন শিলিগুড়ির একদল মহিলা। ফলস্বরূপ মিলেছে একদল পুরুষের রক্তচক্ষু ও কটূক্তি। প্রসঙ্গত,মুক্তধারা ফাউন্ডেশন নামে ওই সংগঠন প্রায় ৪-৫ বছর ধরে শবদেহ শ্মশানঘাটে নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্য করে। বৃদ্ধ কিংবা সন্তানহীন দম্পতিদের সাহায্য, কেউ মারা গেলে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর মতো একাধিক মানবিক কাজ করে থাকেন এই সংগঠনের মহিলা সদস্যারা। এমনকি মরদেহের শেষকৃত্য নিজেরাই করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: মর্মান্তিক ছবি যোগী রাজ্যে, সাইকেলে স্ত্রীর দেহ, Corona আতঙ্কে হল না শেষকৃত্য
গত কয়েক সপ্তাহে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। তাতে অনেকেই আতঙ্কে এখন আর শ্মশানযাত্রী হতে চাইছেন না। নিকট আত্মীয়রা শ্মশানে গেলেও দূরে থাকছেন। সেকারণেই কয়েকদিন ধরে এই মহিলারা নানা জায়গায় গিয়ে শবদেহ নিয়ে শ্মশানে যাচ্ছেন। সোমবার রাতেও কয়েকজন সদস্যা এক দেহ নিয়ে কিরণচন্দ্র শ্মশানঘাটে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন শ্মশানের গেটের কাছে ডিজে বাজিয়ে কয়েকশো যুবক শবদেহের কাছে নাচ করছেন। তা নিয়ে তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। উল্টে হুমকি দেওয়া হয় তাঁদের।
আরও পড়ুন: করোনার প্রকোপে এবার বন্ধ হল মিরিক লেক, মিরিক গার্ডেন
কাবেরি চন্দ নামে সংগঠনের এক সদস্যা জানান, "এখন কেউ শ্মশানে যেতে চাইছেন না। তারপরও আমরা মানবিকতার খাতিরে এগিয়ে এসে দেহ শ্মশানে নিয়ে যাচ্ছি। সোমবার রাতে শ্মশানে কার্যত তাণ্ডব চলছিল। তা দেখে আমরা প্রতিবাদ করায় আমাদের পাল্টা হুমকি দেওয়া হয়। আগামীতে শ্মশানে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়। পুলিশকে ফোন করা হয়েছে। কিন্তু কোনও কারণে ফোন লাগেনি। পরে সেখান থেকে আমরা চলে আসার সময় পিছু করে কিছু যুবক।" এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন বিদায়ী মন্ত্রী গৌতম দেবও। পুলিশের তরফে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে।