Belakobar Chamcham: নরম তুলতুলে নয়। বেশ শক্ত এবং কড়া। চামচ দিয়ে কাটলে ভেতর থেকে তুলনামূলক নরম শাঁসালো এবং রসালো অংশ বের হয়ে পড়বে। তবে একদম নরম নয়। এক টুকরো তুলে মুখে ফেলে চিবোতে থাকুন।
আমরা আলোচনা করছি বেলাকোবার চমচম নিয়ে। স্বাদে এর তুলনা এ শুধু নিজেই। জলপাইগুড়ি জেলার জনপদ বেলাকোবায় স্বমহিমায় বিরাজমান এই মিষ্টি। দূরত্বের দিক থেকে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি থেকে সমান দূরত্ব। যে কোনও জায়গা থেকে গাড়ি ভাড়া করে শুধু বলতে হবে বেলাকোবার মিষ্টি খেতে যাব। বললেই পৌঁছে দেবে।
তবে বেলাকোবার চমচম যে শুধুমাত্র এখানেই পাওয়া যায় তাই নয়। দেশের বহু জায়গায় এই চমচম মেলে। কলকাতা কিংবা দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জায়গাতেও মেলে এই চমচম। তবে মজার বিষয় হল এই যে, চমচম কোথাও তৈরি হয় না। সব এখান থেকেই যায়।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় থেকে জ্যোতি বসু, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই এই মিষ্টির স্বাদ চেখে গিয়েছেন এবং মোহিত হয়েছেন। অভিনেতা দেব, প্রাক্তন সাংসদ ও অভিনেতা প্রয়াত তাপস পাল এবং বহু মানুষ এর স্বাদের জন্য বারবার ঘুরে ঘুরে আসেন।
এ কেমন খেতে তা পরিষ্কার করে বলে বোঝানো মুশকিল। কারণ এ ধরনের মিষ্টি ভারতে মেলা ভার। যাঁরা হালকা মিষ্টির মিঠাই পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এই মিষ্টি নয়। মুখে দেওয়া মাত্র মাথার চাঁদি পর্যন্ত মিষ্টি হয়ে যাবে এই মিঠাইয়ে।
গোটা দেশের মানুষ যাঁরা বেলাকোবাকে চেনেন, তাঁরা চেনেন শুধুমাত্র এই চমচমের জন্য। ছানা-দুধ-ময়দা-চিনি মিশিয়ে অভিনব কায়দায় তৈরি হয় এই মিষ্টি।
যেহেতু তাঁদের এই রেসিপি কারও জানা নেই এবং গোটা দেশের যেখানেই পাওয়া যাক না কেন এখান থেকেই পাঠানো হয়, তাই এবার জিআই তকমার দাবিদার তাঁরা। এ বিষয়ে তাঁরা আবেদনও পাঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত সেই তকমা এসে পৌঁছায়নি। চমচমের মালিকরা আশাবাদী, রসগোল্লা বা মালদার আমের মত চমচমের ট্যাগ পাবেন তাঁরাও।
৮০ বছর থেকে এখানে এই মিষ্টি তৈরি হয়ে আসছে। ধীরেন সরকার ও কালিদাস দত্ত এই দুজন মিলে দেশভাগের সময়ে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে এসে এই জায়গায় মিষ্টির দোকান চালু করেছিলেন। তাঁদের তৈরি অভিনব এই মিষ্টির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। বেলাকোবার চমচম নামে ক্রমশই এর খ্যাতি ডালা-পালা ডালপালা বিস্তার করতে থাকে।
তবে বেলাকোবার চমচমের আরও একটু পুরনো ইতিহাস আছে। এই ইতিহাস স্বাধীনতার আগের ইতিহাস। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অবিভক্ত ভারতের ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইল মহকুমার ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে পোড়াবাড়ি এলাকায় এক ধরনের চমচম বেশ খ্যাতি লাভ করেছিল। স্বাধীনতার আগে এই মিষ্টি পোড়া বাড়ির চমচম নামে বিখ্যাত ছিল ঢাকা থেকে কলকাতা।
দেশভাগের পর পোড়াবাড়ির কিছু কারিগর এপারে চলে আসেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই ধীরেন সরকার ও কালিদাস দত্ত। পোড়াবাড়ির চমচমকে কিছুটা মডিফাই করে রেসিপি অদলবদল করে তাঁরা বাজারে ছাড়েন এই বেলাকোবার চমচম।
আগে একসঙ্গে শুরু করলেও এখন তাদের মালিকানা ভাগ হয়ে দুটো আলাদা দোকান হয়েছে। দুটোই পাশাপাশি দুটোই একই কায়দায় চমচম বানান এছাড়াও বেশ কিছু বছর ধরে বেনাগোবায় আরো কিছু চমচমের দোকান গজিয়ে উঠেছে তবে মূল দোকান এ দুটোই বাকিরা চেষ্টা করলেও এরকম স্বাদ আনতে পারেননি। জানা গিয়েছে পোড়াবাড়ির চমচমের কতগুলি বেশি।
যারা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি বা আশপাশে আসেন গজলডোবা গেলে অথবা ভ্রামরী দেবী কিংবা দেবী চৌধুরানী মন্দির ভ্রমণ করতে এলে চট করে ঘুরে যেতে পারেন। ভারতের বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য এবং সিংগাপুর সহ বিভিন্ন দেশে বেলাকোবার চমচম পাঠানো হয়।