দুর্যোগে বিধ্বস্ত দার্জিলিং। নাগাড়ে বৃষ্টিতে ধস নেমেছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। ফলে বিপর্যস্ত জনজীবন। একাধিক রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে পাহাড় এবং সমতলের। সিকিমের সঙ্গে কালিম্পংয়ের মধ্যে কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। শিলিগুড়ি থেকেও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন কালিম্পং, দার্জিলিং।
মিরিকে গুরুত্বপূর্ণ এবং সংযোগ রক্ষাকারী দুধিয়া ব্রিজ ভেঙে কমপক্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দার্জিলিং জেলার এই দুধিয়া ব্রিজটি মিরিক এবং সংলগ্ন এলাকাকে শিলিগুড়ি ও কার্শিয়ঙের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই ব্রিজ ভেঙে পড়ায় মিরিকের সঙ্গে শিলিগুড়ির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
শনিবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল পর্যন্ত টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত দার্জিলিং, কালিম্পং। তিস্তার জল বেড়ে উঠে এসেছে জাতীয় সড়কে। তিস্তাবাজারের কাছে ২৯ মাইল ভালুখোলায় তিস্তার জল উঠে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক।
শনিবার রাতে মিরিকের সেতু ভেঙে পড়ার কারণে মিরিক এবং শিলিগুড়ির মাঝে আর কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এমনকী, দার্জিলিং শহরের সঙ্গেও যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে মিরিকের। এই নজির সাধারণত নেই।
উদ্ধারকাজ শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় তা ব্যাহত হচ্ছে। কমপক্ষে ৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে মিরিকের ভাঙা ব্রিজ এবং সংলগ্ন এলাকা থেকে। তারা প্রত্যেকেই স্থানীয় বলে খবর। ৩ জন ধারা গ্রাম, ২ জন মিরিক বস্তি এবং ১ জন বিষ্ণু গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ধ্বংসস্তূপের নীচে আরও কেউ কেউ আটকে রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন উদ্ধারকারীরা। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, দিলারামের কাছে রাস্তায় ধস নেমেছে। দার্জিলিঙে যাতায়াতের প্রধান সড়ক যার জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি কালিম্পং এবং সিকিমের দিকে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাতের বৃষ্টিতে রোহিনী রোডের পরিস্থিতিও করুণ। সে রাস্তাতেও একটি অংশে ধসে নেমেছে।
আপাতত পর্যটকদের জন্য রক গার্ডেন, মিরিক লেক, টাইগার হিলে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুর্যোগে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং ট্যুরিস্ট স্পটে না গিয়ে হোটেলবন্দি থাকার কথা বলা হয়েছে।
তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা সহ একাধিক নদী বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। ফলে অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কেও যান চলাচল ব্যাহত। ধসে নেমেছে জায়গায় জায়গায়। জলমগ্ন একাধিক রাস্তা। হুসেইন খোলায় ধস নেমেছে। কার্শিয়ং যেতে গেলে পাঙ্খাবাড়ি এবং ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের রাস্তা ধরতে হচ্ছে। কার্শিয়ং থেকে দার্জিলিং যাওয়ার জন্য ডাউহিল হয়ে যেতে হচ্ছে।
পুজোর পর দার্জিলিং, কার্শিয়ং বেড়াতে গিয়ে কার্যত ফেঁসে গিয়েছে বহু পর্যটক। ক্ষতির মুখে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সোমবারও আবহাওয়ার তেমন উন্নতির আশা নেই। আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং কালিম্পঙের জন্য। আলিপুরদুয়ারে জারি রেড অ্যালার্ট। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপ পশ্চিম ঝাড়খণ্ডের দিকে সরে গেলেও এর প্রভাবেই উত্তরবঙ্গে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত চলছে।