টানা প্রায় দু'বছর ধরে করোনার আক্রমণে সমস্যায় মালদার রেশম চাষীরা। জেলায় এই চাষের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি মানুষ। যাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ মহিলা। জেলায় প্রতিবছর ১৫০০ থেকে ২০০০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয় তুত(রেশম পোকার খাদ্য, এক বিশেষ ধরনের গাছের পাতা) চাষ হয় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে।
কিন্তু সরকারি উদাসীনতায় প্রতিবছরই এই সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। রেশম চাষীদের অভিযোগ, এই দীর্ঘ করোনাকালে রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের পক্ষে কোন ধরনের ভর্তুকি দেওয়া হয়নি। ফলে যে চাষিরা সংকটে পড়েছেন শুধু তাই নয়, মালদা জেলা দেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক অঞ্চলের মুকুট ও হারাতে বসেছে। রেশম উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে এখন প্রথম স্থানে রয়েছে কর্নাটকের কোলার জেলা।
বর্তমানে মালদা জেলায় প্রায় ৭০ হাজার পরিবার রেশম চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত গোটা রাজ্যে এই সংখ্যাটা প্রায় ১ লক্ষ। চাষীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের নির্দেশে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রেশম চাষ ও উৎপাদনের বিশেষ ক্রিমে বেশ কয়েকটি প্রকল্প রূপায়ণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল, ঘাটাল নির্মাণ, গণপরিশোধ প্রকল্প,পলুপোকার ঘর নির্মাণ সহ বিভিন্ন স্কিম। রাজ্য সরকারের এই ঘোষণার পর জেলার রেশন দপ্তর এর তরফ এ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পেয়ে জেলায় নেমে পড়েন এই প্রকল্পে বহু রেশম চাষী। বিভিন্ন জায়গা থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে, এমনকি ঘরের জিনিসপত্র বন্ধক রেখেও অনেকে পলুর ঘর তৈরি করেন। তখন তারা ভেবেছিলেন সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী পরবর্তীতে সরকার তাদের এই অর্থ মিটিয়ে দেবেন।
কিন্তু অভিযোগ দীর্ঘদিন কেটে গেলেও এখনও তারা সেই অর্থ পাননি ফলে এই চরম দুর্দিনে, বিরাট সমস্যায় পড়েছেন রেশম চাষীরা। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ রেশম ও তসর চাষী সমিতির রাজ্য সম্পাদক নইমুদ্দিন সেখ বলেন, আসলে রাজ্য সরকারের অনীহার কারণে জেলার রেশম চাষীরা বর্তমানে এই চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। একসময় জেলায় প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে রেশম চাষ হতো কিন্তু এখন সেই পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে চার থেকে পাঁচ হাজারে। যেখানে কিছুদিন আগেও ৭০ হাজার পরিবার রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজারে। এই দুর্দিনে চাষীদের ভর্তুকি দেওয়া তো দূরের কথা রেশন দপ্তর কে কৃষি দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়ে সর্বনাশ করে দেওয়া হয়েছে যার ফলে মালদা জেলার দ্বিতীয় অর্থকরী ফসলের অস্তিত্ব এখন সংকটে।
জেলা রেশম দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী আচরণবিধির দোহাই দিয়ে রেশম দপ্তরের কর্তারা এই অর্থ চাষীদের দিতে অস্বীকার করেন। যদিও চাষীদের বক্তব্য কোন চালু সরকারি প্রকল্প নির্বাচনী বিধি নিষেধের আওতার মধ্যে পড়ে না। এ মতো পরিস্থিতিতে রেশম দপ্তরের এই অনীহা জেলার চাষীদের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।