সৌদি আরবে আবহাওয়া খুবই শুষ্ক। কারণ সৌদির চারিদিকে প্রায় বেশিরভাগ জায়গা জুড়েই রয়েছে মরুভূমি। তবে পরিবেশ কর্মী আবদুল্লা আবদুলজবার মরুভূমিতে ছায়া দেওয়ার নতুন কৌশল খুঁজে বের করেছেন। তিনি একটি বিশেষ ধরনের গাছের কথা বলেছেন যার মাধ্যমে গরম আটকানো যাবে। এগুলিকে সাক্সৌল গাছ বা (Saxaul Tree) বলা হয়। (সমস্ত ছবি সূত্র-রয়টার্স)
কাসিম এলাকায় প্রচুর পরিমানে Saxaul Tree লাগাচ্ছেন আবদুল্লাহ। আরবী ভাষায় এগুলিকে বলা হয় Al-Ghadha। আব্দুল্লাহ বলেন, এই গাছ থেকে পোড়ানোর জন্য কাঠ এবং গবাদিপশুর খাবার পাওয়া যায়। এ ছাড়া মরুভূমির গরম থেকে স্বস্তি দেয় এই গাছ। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মরুভূমি এলাকায় এই গাছগুলো বেড়ে উঠছে। কিন্তু কেউ তাদের দিকে নজর দেযননি। সেগুলিকেই তাঁরা চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন।
আবদুল্লাহ আব্দুলজাবার বলেন, এসব গাছ লাগানোর একটি বড় সুবিধা হলো, এগুলোর শিকড় মরুভূমিকে বেঁধে রাখে, যাতে ঝড়ে বেশি বালি উড়ে না যায়। আবদুল্লাহ Al-Ghadha পরিবেশবাদী সমিতির সহ-সভাপতি। তাঁদের সংস্থার পরিকল্পনা, এই বছর মধ্য কাসিম এলাকায় তাঁরা ২.৫০ লক্ষ সাক্সৌল গাছ লাগাবেন।
কাসিম এলাকার উনাইজাহ নামক স্থানে মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সাক্সৌল গাছ। সেখানকার মানুষ জানেন এই গাছের উপকারিতা। সৌদি সরকারও চায় মরুভূমিতে এমন গাছ লাগানো হোক, যা সেখানে টিকে থাকতে পারে এবং কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে পারে।
কাসিমের শাসকরা জানান, আগামী এক দশকে তাঁরা তাঁদের পুরো এলাকায় ১০০০ কোটি সাক্সৌল গাছ লাগাবেন। গত বছর সৌদি শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিলেন। এর বাইরে আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও ৪০০ মিলিয়ন স্যাক্সউল গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সমগ্র এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমবে।
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ প্রায়ই খরার সম্মুখীন হয়। উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে হয়। যার জেরে জলের সংকট, সেচের অভাব ও খাদ্য সামগ্রীর সংকট দেখা দেয়। সাক্সৌল গাছের বিশেষত্ব হল এটি এক ফোঁটা জল ছাড়াই বহু মাস বেঁচে থাকতে পারে। এটি সর্বোচ্চ ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। প্রসঙ্গত, উপসাগরীয় অঞ্চলটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ এলাকা হিসেবে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন - রোদে রং বদলায় এই ফোন! লঞ্চ হচ্ছে Reame 9 Pro 5G, দাম কেমন?
গত বছর উনাইজাহ পার্ককে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বিশ্বের বৃহত্তম সাক্সৌল ট্রি বোটানিক্যাল গার্ডেনের মর্যাদা দিয়েছে। এই পার্কটি ১৭২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। পার্কের যেদিকেই তাকাবেন, সেদিকেই সোনালি বালির উপরে দেখা যাবে সবুজ এই গাছ। সেগুলি দেখতে বড় ঝোপের মতো। কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভাষায় সেগুলিও গাছের মর্যাদা পেয়েছে।
Al-Ghadha এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাজেদ আলসোলেম বলেন, সাক্সৌল গাছের দারুণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো জলের প্রয়োজন খুবই কম। এটি জল ছাড়া কয়েক মাস বেঁচে থাকতে পারে। এই কারণে উনাইজাহর লোকজন এই গাছের পূর্ণ যত্ন নেন। এটি এই অঞ্চলের পরিবেশগত প্রতীক।