এখন হাজার চ্যানেলের ভিড়। বিনোদন এখন অত্যন্ত সহজলভ্য। যেন মেনুকার্ড থেকে বেছে নেওয়া যায়। এটা খাব আর এটা খাব না। ২৫ বছর আগে এমনটা ছিল না। তখন চ্যানেল ছিল মূলত ২টো। পুরোটাই সরকার অধীন। সেখানেই ইনস্টলমেন্টে বিনোদন চেটেপুটে নিত আম বাঙালি। দুর্গাপুজোর (Durga Puja) সঙ্গে বাঙালির কী সম্পর্ক তা নিয়ে আলাদা থিসিস লেখার প্রয়োজন নেই। একই সঙ্গে মহালয়ার (Mahalaya) পুণ্য লগ্নে বাঙালির ঘুম ভাঙে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের (Birendra Krishna Bhadra) কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ শুনে। তবে নব্বইয়ের দশক থেকে আরও একটি ব্যতিক্রম ঘটেছিল।
সেই সময় দূরদর্শন বাংলায় (DD Bangla) এক নতুন অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল। মহিষাসুরমর্দিনীর আদলে মহালয়ার নাট্যরূপ অনুষ্ঠিত হতে লাগল। কিন্তু ১৯৯৭ সালে যে অনুষ্ঠআন সম্প্রচার হয়েছিল, তা ২৫ বছর পরে আজও যা অমলিন। ভোর সাড়ে পাঁচটায় সে বছর থেকে মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের নাট্যরূপ দেখানো শুরু হয়। আর দেবী দুর্গার চরিত্রে প্রথম দর্শনেই বাঙালির মনে পাকাপাকি ঠাঁই করে নেন সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় (Sanjukta Banerjee). পর্দায় সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি দেখেই আঁচ আসত পুজো এসে গিয়েছে। প্রথমবার সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দর্শক দূর্গা রূপে দেখে, তাঁর অভিনয় দিয়ে সকলকে মুগ্ধ করেছিলেন। এরপর বহু বছর ধরে টিভির পর্দায় দেখা গিয়েছে তাঁকে মা দুর্গার রূপে।
জানেন কী, মহালয়ায় দেবী দুর্গার অভিনয় করার প্রস্তাব সম্পূর্ণ আকস্মিক ভাবেই পেয়েছিলেন সংযুক্তা। সে সময় তিনি শ্রী শিক্ষায়তন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ শিখতেন নৃত্যগুরু গোবিন্দন কুট্টি (Govindan Kutti)-র কাছে। একদিন হঠাৎই গুরুজি ডেকে পাঠালেন সংযুক্তাকে। নির্দেশ ছিল শাড়ি পরে আসতে হবে। গন্তব্যস্থলে পৌঁছে সংযুক্তা দেখেন, গুরুজী ছাড়াও রয়েছেন আরও কয়েকজন অচেনা ব্যক্তি। সংযুক্তা ছাড়াও আরও কয়েকজন ছাত্রীকেও ডেকেছিলেন গুরুজি। মেয়েরা তাঁরই সমবয়সি। সংযুক্তা প্রথমে কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। হঠাৎই গুরুজি উপস্থিত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করেন, কাকে পছন্দ হয়েছে তাঁদের। সবাই এক বাক্যে সংযুক্তার নাম নেন। এরপর তাঁকে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র বিষয়ে সবিস্তারে জানানো হয়েছিল।
এরপর টানা মাস দু’য়েক কঠিন পরিশ্রম ও ওয়ার্কশপ চলে। রিহার্সালের সময় থাকতো একজন ফাইট মাস্টার। তিনি সংযুক্তাকে শেখাতেন কীভাবে ত্রিশূল ধরতে হবে, চক্র ধরা, কীভাবে মহিষাসুরের সঙ্গে লড়াই করা। দু-তিন সপ্তাহ ধরে চলে শ্যুটিং। পরিচালক-প্রযোজক শমির্ষ্ঠা দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে, সনৎ মোহান্তের পরিচালনায়, ড. নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির স্ক্রিপ্টে তৈরি হয় এই নাট্যরূপ। সময়ের সঙ্গে অনুষ্ঠানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নতুন প্রযুক্তি, উন্নত ভিএফএক্স দিয়ে বিভিন্ন চ্যানেলে মহালয়া দেখানো হলেও, সংযুক্তার মহালয়াকে এখনও ভুলতে পারেনি দর্শক।