বিদায়ী লোকসভায় সাংসদ পদ খুইয়েছিলেন মহুয়া মৈত্র। ক্যাশ ফর কোয়ারি কাণ্ডে সাংসদ পদ খোয়ালেও তাতে ‘ষড়যন্ত্রই’ দেখেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র এবারও মহুয়াকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ভোট প্রচারেও নেমে পড়েছেন মহুয়া। কিন্তু এরমধ্যে নতুন করে সমস্যা বাড়ল কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদের। এবার তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল লোকপাল। বরখাস্ত সাংসদের বিরুদ্ধে ওঠা টাকার বিনিময়ে প্রশ্নের অভিযোগ গুরুতর বলে ব্যাখ্যা করেছে লোকপাল।
মঙ্গলবারই তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে লোকপাল। 20(3)-এর ধারায় CBI তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির সঙ্গে সংসদীয় পোর্টালের লগ-ইন পাসওয়ার্ড শেয়ার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে। জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগে এরপর সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তৃণমূল নেত্রীকে। এবার লোকসভা সিবিআই-কে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিল লোকপাল। শুধু তাই নয়, প্রতি মাসে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে রিপোর্টও জমা দিতে হবে সিবিআই-কে। লোকপাল ওই নির্দেশে জানিয়েছে, "ধারা ২০(৩)-এর অধীনে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই। এই নির্দেশের ৬ মাসের মধ্যে তদন্তের প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি জমা দিতে হবে। সিবিআই প্রতি মাসে তদন্ত নিয়ে পর্যায়ক্রমিক রিপোর্ট দেবে।"
এবারের কৃষ্ণনগরের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ‘গুরুতর’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে লোকপালের নির্দেশিকায়। লোকপালের তিন বিচারপতি অভিলাষা কুমারী, অর্চনা রামাসুন্দরম এবং মহেন্দ্র সিং এই অভিযোগকে ‘গুরুতর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। যা এখন চর্চার বিষয়। এদিকে লোকপাল যে নির্দেশিকা দিয়েছে তাতে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলার উল্লেখ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে জাতীয় রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। অভিযোগ ওঠে তিনি দর্শন হিরানন্দানির থেকে টাকা নিয়ে লোকসভায় গৌতম আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন করেছেন। এই নিয়ে লোকসভার এথিক্স কমিটির কাছে নালিস ঠোকেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।
ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেই প্রথম অভিযোগ এনেছিলেন যে তৃণমূল সাংসদ ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করেন। উঠে আসে দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির নাম। মহুয়া মৈত্রের প্রাক্তন সঙ্গী তথা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জয় অনন্ত দেহদ্রাই-ও এই অভিযোগ সমর্থন করেন এবং প্রমাণ পেশ করেন। সংসদে অভিযোগ ওঠার পর এথিক্স কমিটি গঠন করা হয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এথিক্স কমিটির তদন্তের পর সংসদে “অনৈতিক কার্যকলাপের” অভিযোগে সাংসদ পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তৃণমূল নেত্রীকে। এবার সেই মামলার তদন্তভার সিবিআই-র হাতে তুলে দিল লোকপাল।