Raigunj Loksabha Kendra 2024: এক সময় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির খাসতালুক বা দুর্ভেদ্য গড় হিসেবে পরিচিত হতো রায়গঞ্জ। কয়েক দশক ধরে এই রীতি ও মিথ অভেদ্য ছিল। তব বাম আমলে বামেদের দাপটও কম ছিল না। পালা করে এখানকার রাজপাট ভাগ করে নিয়েছে বাম ও কংগ্রেস। প্রিয়বাবু অসুস্থ হওয়ার পর তঁর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও গড় ধরে রেখেছিলেন। ২০১৪ সালে অল্প সংখ্যক ভোটে দীপা দাশমুন্সিকে হারিয়ে যখন মহম্মদ সেলিম জিতলেন, মনে করা হয়েছিল উত্তরে অক্সিজেন পাবে বাম সংগঠন। কিন্তু তা হয়নি। বরং পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা সব দখল করে নেয় তৃণমূল। কিন্তু অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের সন্ত্রাসের। এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ উগরে দেন। এর মাঝে ২০১৯ ভোটের ঠিক এক বছর আগে দাড়িভিট কাণ্ড ঘটে যায়। স্থানীয় স্কুলে উর্দুর বদলে বাংলাভাষার শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দুজন। জনতার ক্ষোভ আছড়ে পড়ে ভোট বাক্সে। যার ফলে ক্রমশ দুর্বল হয়ে আসা কংগ্রেস ও রাজ্য থেকে ক্ষমতাচ্যুত সিপিএমকে নস্যাৎ করে উঠে আসে বিজেপি। ৫৭ বছরের ইতিহাস ওলটপালট করে ৪৯ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করেন দেবশ্রী চৌধুরী।
যদিও সেই ঘটনার পর ৫ বছর পার হওয়ার পর সাংসদ ও বিজেপির প্রতি সেই টান এখন আর নেই এলাকাবাসীর। এমনকী সাংসদ দেবশ্রীকে এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি ছাড়া দেখা যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। সময়ের ব্যবধানে কংগ্রেস-বামেরা এখন পাশাপাশি। তাই এবার বামেদের প্রার্থী নেই এখানে। কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে ইমরান আলি ভিক্টর রমজকে। তাঁকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়াতে জান লড়িয়ে দিতে য়া হাত-কাস্তের জোট। অন্যদিকে গতবার অল্প ব্যবধানে হারা কানাইয়ালাল আগরওয়াল ও তাঁর অনুগামীরা তিনি টিকিট না পাওয়ায় কিছুটা ক্ষুব্ধ। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তাঁদের ক্ষোভ যে স্বয়ং তৃণমূলের পালের হাওয়া কিছুটা হলেও কেড়ে নেবে তা নিশ্চিত। ফলে তৃণমূল প্রার্থীকে অন্য় দলের সঙ্গে নিজের দলের মধ্যেও লড়াই করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। এর মাঝে রামমন্দির ইস্যু কিছুটা হলেও বিজেপিকে এগিয়ে রাখছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
ভোটার-১৬,০১,২২০
পুরুষ-৭,৬৯,৭০৭
মহিলা-৮,৩১,৫৬৫
অন্য়ান্য-৪৮
বিধানসভা কেন্দ্রগুলি
১. ইসলামপুর বিধানসভা কেন্দ্র
২. গোয়ালপোখর বিধানসভা কেন্দ্র
৩. চাকুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্র
৪. করণদিঘি বিধানসভা কেন্দ্র
৫. হেমতাবাদ বিধানসভা কেন্দ্র
৬. কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র
৭. রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র
ইস্যু- ইস্যু জোরালো নয়। দাড়িভিট কাণ্ড এখন অতীত। এমনিতে শিল্প-রোজগার এখানে আগেও তেমন ছিল না, এখনও নেই। মুখ্য়মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। মানুষ এখন সেই আশ্বাসকে কীভাবে নিয়েছেন তার উপর অনেকটাই নির্ভর করবে ভোটের ফল। এখানে লড়াই মূলত ত্রিমুখী। তৃণমূলের প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণীকে দলেরই অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। বিশেষ করে তাঁর ‘দলবদলু’ ভাবমূর্তি নিয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে প্রার্থী না করায় দলেরই একাংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরীও খুশি নন। ফলে তৃণমূলের লড়াইটা বেশ কঠিন হতে চলেছে। অন্যদিকে বিজেপির সংগঠনের অবস্থা ভালো নয়। এবার নির্বাচনে ফ্যাক্টর হতে পারে হিন্দু-মুসলিম ভোট কাটাকাটি। রামমন্দির ইস্যুতে কিছু ভোট ঢুকবে গেরুয়া শিবিরে। আবার সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশ কংগ্রেস এবং তৃণমূল ভাগাভাগি করে নিতে পারে। কারণ বাম-কংগ্রেস প্রার্থী নিজে সংখ্যালঘু। আর এই ভোট কাটাকাটির ফায়দা তুলে আর রামমন্দিরের সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে আরও একবার বাজিমাত করে বেরিয়ে গেলে অবাক হওয়ার থাকবে না।
এ পর্যন্ত জয়ী সাংসদদের তালিকা
১৯৬২ চপলা কান্ত ভট্টাচার্য কংগ্রেস
১৯৬৭ চপলা কান্ত ভট্টাচার্য কংগ্রেস
১৯৭১ সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় কংগ্রেস
১৯৭২ মায়া রায় কংগ্রেস
১৯৭৭ মহম্মদ হায়াত আলি জনতা পার্টি
১৯৮০ গোলাম ইয়াজদানি কংগ্রেস
১৯৮৪ গোলাম ইয়াজদানি কংগ্রেস
১৯৮৯ গোলাম ইয়াজদানি কংগ্রেস
১৯৯১ সুব্রত মুখোপাধ্যায় সিপিএম
১৯৯৬ সুব্রত মুখোপাধ্যায় সিপিএম
১৯৯৮ সুব্রত মুখোপাধ্যায় সিপিএম
1999 প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি কংগ্রেস
২০০৪ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি কংগ্রেস
২০০৯ দীপা দাশমুন্সি কংগ্রেস
২০১৪ মোহাম্মদ সেলিম সিপিএম
২০১৯ দেবশ্রী চৌধুরী বিজেপি