নবান্ন দখলের লড়াইয়ে এবার পুরনো ফরমুলা ব্যবহার করতে চলেছে গেরুয়া শিবির। এরআগে রথাযাত্রা দিয়েই সংসদীয় রাজনীতিতে ক্ষমতা বাড়াতে দেখা গিয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। লালকৃষ্ণ আদবানীর ১৯৯২ সালের ‘রাম রথযাত্রা’ এখনও জাতীয় রাজনীতিতে আলোচ্য বিষয়। এই রথযাত্রাই প্রচারের আলোয় এনেছিল বিজেপি ও আদবানীকে। এরপর দেশের নানা প্রান্তে নানা উদ্দেশ্যে রথ বের করেছে পদ্মশিবির। এবার সেই কৌশল তারা প্রয়োগ করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গেও। এবার কেন্দ্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যজুড়ে রথযাত্রার আয়োজন করতে চলেছে বিজেপি। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেই এই রথযাত্রার আয়োজন করা হবে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি যার সূচনা করবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা।
এরাজ্যের বিধানসভা ভোটে পদ্ম ফোটানোই এখন লক্ষ্য ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বের। তারজন্য চেষ্টার কোন কসুর করছে না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রতিমাসেই রাজ্য সফরে আসছেন জেপি নাড্ডা -অমিত শাহের মত দলের প্রথম সারির নেতারা। এমনকি চলতি মাসে নেতাজি জয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী পা রাখছেন শহর কলকাতায়। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ভিড় লেগেই রয়েছে বঙ্গে। এর মধ্যেই এবার ২১-এর ভোট জিততে বাংলায় রথ রাজনীতি প্রয়োগ করতে চাইছে পদ্মশিবির।
রাজ্যবাসীর কাছে পৌঁছতে এই রথযাত্রা কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে পরিবর্তন যাত্রা। সূত্রের খবর গত শুক্রবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাসভবনে এই বিষয়ে বাংলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। জানা যাচ্ছে ভোটের ঠিক আগে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় এক মাস ধরে ৫টি রথযাত্রা বের করবে গেরুয়া শিবির। যার লক্ষ্য মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানো তা আলাদা করে বলে দেওয়ার দরকার নেই।
রাজ্যের ২৯৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রেই পৌঁছবে গেরুয়া রথ। জানা যাচ্ছে বিজেপির সর্বভাপতীয় সভাপতি নাড্ডা এই যাত্রার সূচনা করলেও এতে অংশ নিতে পারেন খোদ অমিত শাহও। আগামী ১০ এবং ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি ফের বঙ্গ সফরে আসতে পারেন। সেই সময় পরিবর্তন যাত্রায় অংশ নেবেন শাহ।
বিজেপির রথযাত্রার রাজনীতি বহু পুরনো। যার শুরু হয়েছিল আটের দশকের শেষের দিকে। এরাজ্যে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগেও রথযাত্রার পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি। কিন্তু তখন প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় সেই পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত মামলা গড়িয়েছিল হাইকোর্টে। রাজ্য সরকার আদালতে বলেছিল, রথযাত্রার যে সূচি তৈরি করা হয়েছে, তাতে জায়গায় জায়গায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। এব্যাপারে রাজ্য সরকারের তরফে আদালতে গোয়েন্দা রিপোর্টের কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে বিজেপির সেই কর্মসূচি বাধা পায়। এবার জানা যাচ্ছে পাঁচটি প্রান্ত থেকে আলাদা আলাদা ভাবে রথগুলি বের করা হবে। এমনভাবে রথগুলি যাবে, যাতে কোনও না কোনও রথ রাজ্যের ২৯৪ টি কেন্দ্র ছুঁয়ে যেতে পারে।
প্রাথমিক পরিকল্পনায় ঠিক হয়েছে, রথযাত্রার সূচি এমনভাবে করা হবে, যাতে দলের প্রথমসারির নেতারা এক-একটি রথযাত্রায় অন্তত একসপ্তাহ সময় দিতে পারেন। এছাড়াও বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তরের নেতারাও এই রথযাত্রায় থাকবেন। রথযাত্রা যেহেতু প্রত্যেকটি বিধানসভা ছুঁয়ে যাবে, তাই বিধানসভা ভিত্তিক নেতারা এবং জেলার নেতাদেরও এই রথযাত্রায় গুরুত্ব দেওয়া হবে। এর আগে একাধিক রাজ্যে এই উপায়ে সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। এবার সেই উপায় বাংলায় প্রয়োগ করতে চলেছে গেরুয়া শিবির। তবে গেরুয়া শিবিরের এই কর্মসূচিকে নবান্ন গ্রিন সিগন্যাল দেয় কিনা সেটাই এখন দেখার।