বাংলার ভোট প্রচার জমজমাট। আর এর মাঝে যেন কথার লড়াই চলছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতাদের মধ্যে।
পথসভা, পদযাত্রা, জনসভা থেকে ভার্চুয়াল- সব জায়গায় যেন এক পক্ষের থেকে দখল করতে চাইছে অন্যপক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস বিধানসভা ভোট 'বাংলা নিজের মেয়েকেই চাই' দিয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছিল।
অন্যদিকে, বিজেপিও কিছু কম যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা দফায় দফায় আসছেন বাংলায়। অমিত শাহ বার বার দাবি করেছেন, এ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। আর বিজেপি পাবে ২০০-র বেশি আসন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলার ভোটের প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'দিদি ও দিদি' বলে সম্মোধন করেছেন। আর এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তৃণমূল তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে অসম্মান করছেন তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর এই বিষয়টি মহিলা ভোটারদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মানুষ।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস (এনইউজেএস)-এর অধ্যাপক রুচিরা গোস্বামীর মতে, এ দেশে পুরুষ রাজনীতিবিদরা এক উত্তরাধিকার বহন করেন। আর তাঁরা মহিলাদের 'বউ', 'মা' হিসেবে সম্বোধন করেন। স্বাধীনতার পর থেকে এমনটা হয়ে আছে। আমার মনে হয় এটা পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিফলন। এমনটা হতেই পারে এই ঘটনা মহিলা ভোটারদের ওপর কোনও প্রভাব ফেলনা না। কিন্তু পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং পুরুষ-ভাষা বুঝিয়ে দেয় আপনি মহিলাদের কী চোখে দেখেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিখা মুখোপাধ্যায়ের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য ভোটারদের তিন ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বলা যেতে পারে, বিশ্বের মহিলারা তিন ভাগে বিভক্ত। একদল নির্যাতনের কথা সরাসরি বলেন। অন্য দল নির্যাতন হয়েছে এমনটা মনে করতে চান না। এবং এটাই সবথেকে বড় অংশ। আর তৃতীয় দল হল যাঁরা অত্যন্ত কড়া ভাবে এর প্রতিক্রিয়া দেন তার মধ্যে মহিলাদের জবাব দিতে পারেন। কারণ তাঁরা চাইবেন না এক মহিলার প্রতি এরকম ব্যবহার।
তবে ভিন্নমত পোষণ করছেন কলকাতার গৃহবধূ রসিকা গুপ্তা। তিনি বলেন, আমি মনে করি না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যে কোনও খারাপ কিছু রয়েছে। তিনি যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্বোধন করছে তা মোটেই খারাপ না। এটা কোনও ভাবেই অসম্মাজনক বলা যায় না।
শিখা মুখোপাধ্যায়ের মতে, আপনি কোনও মহিলাকে অসম্মান করলে তারা তা অগ্রাহ্য করবেন, মেনে নেবেন না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা আসলে আর কিছুই না, মুখ্যমন্ত্রীকে অসম্মান করা। তিনি মুখ্যমন্ত্রী কে অসম্মান করছেন।
এদিকে প্রচারের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবনে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে যেভাবে আক্রমণ করেছেন, তা অনেকে আপত্তি জানিয়েছে। এমনকি তা অনেক মহিলা ভোটারদের কাছে আপত্তির ঠেকেছে। তাঁদের মনে হয়েছে একজন মহিলা নেত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর এমন ধরনের মন্তব্য করা উচিত হয়নি।
তেমনই একজন দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা সান্দা মিত্র। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের প্রতিবাদ করছেন, আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি থাকি সুন্দরবনে। সেখানকার সভায় তিনি যা বলেছেন, তা ঠিক নয়।