রাজনৈতিক নেতাদের সংবাদ মাধ্যমকে আক্রমণ শানাতে বহুবার দেখা গেছে। সেই পথেই হেঁটেছিলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। 'কর্মীসভায় সংবাদ মাধ্যম কেন? কে ডেকেছে এই ২ পয়সার প্রেসকে' রবিবার নদিয়ার গয়েশপুরে দলীয় কর্মীদের বৈঠকে উপস্থিত সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে এমনই মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছিল এই তৃণমূলনেত্রীকে। তার প্রভাব যে এতটা সুদূর প্রসারি হবে তা হয়তো নিজেও বুঝতে পারেননি তৃণমূল সাংসদ। রবিবার রাত থেকেই তৃণমূল সাংসদের মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় হচ্ছিল সোশ্যাল মিডিয়া। অস্বস্তিতে পড়েছিল মহুয়ার দলও। এসবের মধ্যেই নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন তৃণমূল সাংসদ। তবে দিনের শেষে সংবাদ মাধ্যমকে বেনজির ভাবে আক্রমণ করার জন্য ক্ষমা চাইলেও বিতর্ক জিইয়ে রাখলেন মহুয়া মৈত্র।
সরকারি কর্মীদের হুঁশিয়ারি, রাজ্যপালের ভাষা এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কন্ঠে
নদিয়ার তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব মহুয়া মৈত্রের হাতে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।বিধানসভা নির্বাচনের আগে জনভিত্তি তৈরিতে রবিবার গয়েশপুরে দলীয় বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন মহুয়া। কিন্তু তার মাঝেই কর্মীদের বিক্ষোভের সম্মুখীন হতে হয় কর্পোরেট জগত থেকে রাজনীতিতে পা রাখা এই নেত্রীকে। পোস্টার প্ল্যাকার্ড হাতে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন কয়েকজন কর্মী-সমর্থক। এমনকি দলেরই দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতি মধ্যে পড়তে হয় কৃষ্ণনগরের সাংসদকে। আর তাতেই মেজাজ হারান মহুয়া। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘এটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিছু রাগ অভিমান ছিল। সেগুলো বৈঠকের পর মিটে গিয়েছে। খুব ভাল আলোচনা হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিতেই পারে। খুব সাধারণ ব্যাপার। আমি ফের জানুয়ারিতে আসব।’এরপরই সংবাদিকদের নিশানা করেন মহুয়া। নজিরবিহীন ভাবে উচ্চশিক্ষিত সাংসদ বলেন, ‘কে ঢুকতে দিয়েছে প্রেসকে? দু পয়সার প্রেস। বেরিয়ে যান।’
সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে মহুয়ার বলা সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় মহুয়াকে কটাক্ষ করতে শুরু করেন সংবাদকর্মীদের একটা বড় অংশ। তুমুল বিতর্ক শুরু। ফেসবুক, ট্যুইটারে মহুয়া মৈত্রের এই মন্তব্য ভাইরাল করে দেওয়া হয়। নেটিজেনরাও এই নিয়ে সরব হন।
মহুয়া মৈত্রের সাংবাদিকদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিবৃতি জারি করে কলকাতা প্রেস ক্লাবও। লকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের স্বাক্ষর করা বিবৃতিতে বলা হয়, 'কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র সাংবাদিকদের সম্বন্ধে যে মন্তব্য করেছেন তাতে প্রেস ক্লাব উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং তীব্র প্রতিবাদ করছে। তাঁর এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত, অপমানজনক। তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল হলেও কিন্তু মহুয়া তাঁর বক্তব্য থেকে সরেননি। তৃণমূল সাংসদ দাবি করছিলেন, তিনি সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি। বলেছেন, তাঁর দলের কিছু কর্মী নিজেদের ‘মুখ দেখাতে’ দলীয় বৈঠকে সংবাদমাধ্যমকে ডেকে এনেছিলেন। তিনি তাঁদের সমালোচনা করেছেন। যদিও সন্ধ্য়ায় নিজের মন্তব্যের জন্য ট্যুইটারে ক্ষমা চান তৃণমূলনেত্রী। সেখানে লেখেন, ‘আই অ্যাপোলোজাইজ ফর দ্য মিন হার্টফুল অ্যাকিউরেট থিংস আই সেড।' যদিও সেখানে কথার প্যাচ জিইয়ে রেখেছেন তৃণমূল সাংসদ। মহুয়া বলেছেন, 'নিম্নমানের দুঃখজনক সঠিক কথা বলার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী’। অর্থাৎ ‘সঠিক’ ওই মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।
My meme-editing skills are improving! pic.twitter.com/PyO69avwRi
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) December 7, 2020
এর আগেও বহুবার সংবাদ মাধ্যমকে আক্রমণ শানাতে দেখা গেছে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। একাধিক সংবাদ মাধ্যমে টাকা দিয়ে ভুয়ো খবর প্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এবার তৃণমূলনেত্রীর ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন মহুয়া মৈত্রও সেপথে হাঁটলেন।