কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোকাবিলা করতে দাওয়াই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন প্রয়োজনে সিআরপিএফ জওয়ানদের ঘেরাও করে রাখতে। এই নিয়েই কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। আর এই অভিযোগ জানাতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে আরেকটি নালিশও করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। চুঁচুড়ার বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্টকে ফোন করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছে গেরুয়া শিবির। এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূলনেতা মদন মিত্রের এক ঘনিষ্ঠের।
বুধবার বিকেলে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে যায় বিজেপির এক প্রতিনিধি দল। এই দলে ছিলেন বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া, সাংসদ অশ্বিনী বৈষ্ণব-সহ মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদিকা এবং দুই আইনজীবী। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া বলেন, "এই রাজ্যের কেয়ারটেকার মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলছেন এবং কর্মীদের পরিষ্কার নির্দেশ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করতে। তিনি কোচবিহারে জনসভা থেকে কর্মীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, একটা দল কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করবে এবং আরেকটা দল ভোট দেবে। তারপর আরেকটা দল ঘেরাও করবে, এইভাবে তিনি নিজের দলের কর্মীদেরকে অক্ষরে অক্ষরে বোঝাচ্ছেন কিভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে।" কেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি এই ভাষায় কথা বলছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়ার প্রশ্ন তুলেছেন, "আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি তিন দফায় ভালো করে ভোট গ্রহণ হয়েছে, প্রায় অধিকাংশ আসনেই মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মত প্রদান করতে পেরেছে। তিনদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনে কড়া চিঠি দেওয়ার পরও তিনি এই কাজটি কি করে অবাধে করছেন?" তাই অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বন্ধ করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে কড়া দাবি জানিয়েছে বিজেপি। শিশির বাজোরিয়ার বলেন, "অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বন্ধ করা হোক অথবা তাকে সেন্সর করা হোক, এমনটাই আমরা দাবি জানিয়েছি মুখ্য নির্বাচন আধিকারিককে"।
লকেটের নির্বাচনী এজেন্টকে হুমকি
এদিকে চুঁচুড়ায় বিজেপির প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্টকে মধ্যরাতে ফোন করে হুমকি এবং অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। এই নিয়ে গেরুয়া শিবিরের প্রতিনিধি দল কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, মঙ্গলবার মধ্যরাতে লকেটের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্টের কাছে একটি ফোন আসে এবং তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, যে নাম্বার থেকে ফোন এসেছিল সেই নম্বরটির ট্রুকলারে যে ছবি উঠেছে সেই ব্যক্তিকে তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এই ফোন কলের পর থেকে আমি এবং আমার পরিবার ভীষণ আতঙ্কিত রয়েছি। মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাছে দাবি রেখেছি, হুমকি দেওয়া ওই ব্যক্তিকে যেন অবিলম্বে গ্রেফতার করা হয়। শুধু তাই নয় এর নেপথ্যে যার মস্তিষ্ক রয়েছে তাকেও গ্রেপ্তার করা হোক।"
এছাড়াও বিজেপির প্রার্থী পাপিয়া অধিকারীকে তৃতীয় দফার নির্বাচনের দিন হেনস্থা করার অভিযোগ নিয়েও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয় বিজেপির প্রতিনিধিদল। বিজেপির দাবি, এর ফলে সার্বিকভাবে যে বার্তা নিচুস্তরের কর্মীদের মধ্যে যাচ্ছে তা ভয়ঙ্কর, রাজ্যে যেকোনো সময় বড় অঘটন ঘটতে পারে, তাই নির্বাচন কমিশনের কড়া অবস্থান নেওয়া একান্তই প্রয়োজন।