করোনায় চাকরি হারিয়েছেন ? অথবা মাইনে কেটে হাতে যা পাচ্ছেন, তাতে সুবিধা হচ্ছে না ! অথচ পুজোর খরচে হাত ফাঁকা ! আর চাকরি করবেন ? বিশ্বাস চলে যাচ্ছে চাকরির উপর থেকে ? তাহলে আর কী ! চাকরি ছেড়ে দিব্যি ব্যবসার দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। ব্যবসা কিংবা স্বাধীন কাজ এখন ট্রেন্ডিং। পুঁজি প্রায় নেই বললেই চলে। কোনওটাতে যা খরচ আছে শুরু করার। তা ধর্তব্যের মধ্যে নয়।
অনলাইনে স্বাবলম্বী হওয়ার উপায়
বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার হাতছানিতে অনেকেই স্বল্প পুঁজি কিংবা কখনও বিনা পুঁজিতে অনলাইন ব্যবসা করার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আবার অনেকেরই অনলাইনে ব্যবসা করার ইচ্ছা থাকলেও বুঝে উঠতে পারছেন না। মূলধন ছাড়া কখন কীভাবে কোন ব্যবসাটি দিয়ে শুরু করবেন, আবার শুরু করলেও কি ব্যবসাটি আদৌ লাভের মুখ দেখবে কি না, এসব প্রশ্ন কাঁটার মতো ফুটতে পারে। তাদের জন্য টিপস।মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ অথবা ডেস্কটপ, কিংবা ট্যাবলেট যে কোনও একটি থাকলেই হবে।
ডেটা এন্ট্রি
প্রায় সব ধরনের কোম্পানিরই তাদের ব্যবসায়িক লেনদেনের হিসাব-নিকাশ,কর্মকতা-কর্মচারীদের তথ্য সহ নানান তথ্যাদি সুনির্দিষ্টভাবে ডেটাবেসে সংরক্ষণ করতে হয়। মূলত এই কাজগুলোই হচ্ছে ডেটা এন্ট্রি। বিভিন্ন ছোট ছোট কোম্পানিগুলো এই কাজ গুলোর জন্য ফুল টাইম কর্মী না রেখে বিভিন্ন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর দিয়ে করিয়ে থাকেন। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ইত্যাদি অ্যাপলিকেশনে কাজ করতে দক্ষ হলে তবে আপনিও বিভিন্ন কোম্পানির জন্য ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করতে পারেন।বর্তমানে খুব দ্রুত বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট, স্টার্টআপ গড়ে উঠায় ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের চাহিদা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। তাই আপনিও ঘরে বসে খুব সহজে বিভিন্ন কোম্পানির নানাবিধ ডেটা এন্ট্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
অনলাইন শপ
অনলাইন শপের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আয় করার মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেকে। সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে আপনার বন্ধুদের সাথে বা যে কারও সাথে পার্টনারশিপ এর মাধ্যমে কিংবা নিজে নিজে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে উপার্জনের পথ খুলতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট অথবা ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার পণ্য বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও বর্তমানে অনেক ই-কমার্স সাইট গড়ে উঠছে।এসব ই-কমার্স সাইটেও আপনার শপ খুলতে পারেন।
অনলাইন কোর্স
বর্তমানে বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে নানাবিধ বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য মানুষ অনলাইনের প্রতি নির্ভরশীল হচ্ছে। তাই অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স কিনে ঘরে বসে মানুষ সময়-সুযোগ অনুযায়ী শিক্ষা অর্জন করছে। এক্ষেত্রে আপনার যদি কোনও একটি বিষয়ে পারদর্শিতা থাকে, তবে আপনি সেই বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও তৈরি করতে পারেন। সেই ভিডিওগুলো কোর্স আকারে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স সম্বলিত প্ল্যাটফর্ম যেমন, Udemy, Skillshare, Upgrade ইত্যাদিতে বিক্রি করতে পারেন।
ইউটিউবে ভিডিও তৈরি
বর্তমানে তরুণদের মাঝে ইউটিউবিং অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেক তরুণ ইউটিউবে বিভিন্ন বিষয়ক ভিডিও বানিয়ে আয় করে থাকে। বিভিন্ন মানুষ এন্টারটেইনমেন্ট, শিক্ষামূলক ভিডিও থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিও বানিয়ে বিজ্ঞাপন, স্পন্সর ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষ আয় করে থাকে। ভিডিও যত বেশি দর্শকদের নিকট পৌছাবে, যত বেশি দর্শক দেখে থাকবে তত বেশি আয় করতে পারবেন।
কনটেন্ট রাইটিং
অনলাইনে আয়ের অন্যতম একটি সুবিধাজনক উপায় হলো ব্লগ লেখা। আপনি চাইলে আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইটে ব্লগ লিখতে পারেন কিংবা অন্য কোনও ক্লায়েন্টের জন্য লিখে দিতে পারেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির জন্য কোনো পণ্যের বর্ণনা থেকে শুরু করে পণ্যের রিভিউ লেখা, ওয়েব কন্টেন্ট লেখা, ট্রান্সক্রিপশন, ট্রান্সলেশন ইত্যাদি লেখা সহ বিস্তর বিষয়ে লিখে দিতে পারেন। আর বিভিন্ন সংবাদপত্র কিংবা ম্যাগাজিনেও বিভিন্ন বিষয়ে লিখে আয় করতে পারেন। তাই আপনার লেখালেখিতে দক্ষতা থাকলে ঘরে বসে সুষ্ঠুভাবে আয় করতে পারেন আপনিও।
ই–বুক রাইটিং
বর্তমানে প্রযুক্তি উৎকর্ষতায় সব কিছুই ইন্টারনেট ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বদলে গিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। যার ফলে বিভিন্ন মানুষ তাঁর ব্যস্ত জীবনে বাস্তবিকভাবে বই পড়ার চেয়েও ই-বুক এর প্রতি অনেক নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তাই যদি লেখালেখিতে ঝোক থাকে তবে আপনিও শুরু করতে পারেন ই-বুক রাইটিং।অ্যামাজন সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনার তৈরিকৃত ই-বুক টি পাবলিশ করার মাধ্যমে আয় করে নিতে পারেন। আপনি ব্লগিং, ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস ইংরেজি কিংবা বাংলায় লিখে আয় করে নিতে পারেন।
পডকাস্টিং
পডকাস্ট হলো এক ধরনের অডিও সিরিজ বা শো যা বিভিন্ন জনপ্রিয় সাইট যেমন, Spotify, Podbean, anchor.fm, Mixed Tape ইত্যাদি সহ বিভিন্ন সাইটে অথবা নিজস্ব ওয়েবসাইটে আপলোড দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের মানুষ এসব সিরিজ তাদের প্রয়োজনীয়তা এবং রুচি অনুযায়ী ডাউনলোড করে তাদের সময়-সুযোগ অনুযায়ী শুনতে পারে। তাই ঘরে বসেই সামান্য কিছু প্রয়োজনীয় ইনস্ট্রামেন্ট এর সহযোগিতায় পডকাস্ট তৈরি করার মাধ্যমে ভাল আয় করতে পারেন।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কনসালটেন্ট
একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের সার্চ রেজাল্টে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটটিকে অন্য সাইটগুলোকে পিছনে ফেলার মাধ্যমে সবার আগে প্রদর্শিত করার প্রচেষ্টা করে একজন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার। মূলত কোনও একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের কোনও আর্টিকেল কিংবা যে কোনও কিছু একটি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার ভূমিকা রেখে থাকে। কি-ওয়ার্ড এনালাইসিস, ভিডিও ইমেজ, ওয়েবপেইজ, পিডিএফ সহ ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য ক্রলিং এবং ইনডেক্সি এর মাধ্যমে যাতে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটটি কাঙ্ক্ষিত ভিজিটরের সার্চে উপরে থাকে এজন্য কোম্পানিগুলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজারের দ্বারস্থ হতে হয়।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার কোনও বিক্রেতার পণ্য বা সেবা যে কোনও অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক বহির্ভূত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকেন। বিনিময়ে বিক্রেতা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার কিংবা ঐ ওয়েবসাইটকে তাঁর বিক্রিত পণ্যের একটি লভ্যাংশ দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট কিংবা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন, ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করে কোনও একটি কোম্পানির পণ্য রেফার বা প্রচার করতে পারেন এবং সেখান থেকে যদি পণ্যটি বিক্রি হয় তবে ঐ পণ্য থেকে আপনি একটি কমিশন পেয়ে থাকবেন।
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
বিনা পূঁজিতে ঘরে বসে তুলনামূলক কম পরিশ্রমে আয় করার একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো ভার্চুয়াল অ্যাসিসট্যান্ট এর কাজ করা। মূলত একজন ভার্চুয়াল অ্যাসিসট্যান্ট যে কোনো কোম্পানির জন্য বিভিন্ন কাজ অফিসে সশরীরে উপস্থিত না থেকে নিজ সুবিধামতো বাড়িতে কিংবা যে কোনও জায়গায় বসে করে দিয়ে থাকেন। সময়ের সাথে বাড়ছে বিভিন্ন স্টার্টআপ এবং ছোট কোম্পানির সংখ্যা। তাই এসব নতুন এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলক কম পারিশ্রমিকে বিভিন্ন কাজের জন্য ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। যেমন, বুককিপিং, ডেটা এন্ট্রি, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ব্লগ লেখা, কনটেন্ট সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, ইমেইল ম্যানেজমেন্ট, কাস্টমারদের ফোনকল গ্রহণ, ইন্টারনেট মার্কেটিং সহ বিভিন্ন কাজ একজন ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট করে থাকেন।