ষষ্ঠীতে বোধন। সপ্তমী থেকে পুজো শুরু। দশমীতে দেবী প্রতিমা বরণ করার পর হয় সিঁদুর খেলা। সাধারণত দুর্গাপুজোর এই রীতিই সকলের জানা। কিন্তু এ বাংলায় এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে সপ্তমীতেই সিঁদুর খেলেন এলাকার সকল মহিলা।
বীরভূমের জেলার বোলপুরের অনতি দূরে দুবরাজপুর। বেশিরভাগ মানুষ মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের জন্যই এই জায়গাটির নাম মনে রাখেন। সত্যজিৎ রায় ‘অভিযান’ ছবিতে রাজ্যের এই লাল-মাটি অধ্যুসিত অঞ্চলটিকে খুব সুন্দর করে সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন। এখানকার দুর্গাপুজোর রীতি, সপ্তমীতে ধূমধামের সঙ্গে কলাবউ বা নবপত্রিকা স্নান করানোর পর পূজা মণ্ডপে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই আচারকে এখানে বলা হয় ‘দোলা নিয়ে আসা।’ পূজার আচার সম্পন্ন হলে এবং দেবীকে সিঁদুর পরানোর পর শুরু হয় মহিলাদের সিঁদুর খেলা। দশমীর মতোই এখানে সকলে সকলের স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। সপ্তমীর পুজো শেষ করার পর এখানে মন্দিরে মন্দিরে চালকুমরো বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে।
আরও একটি রীতি এখানকার বেশিরভাগ বাড়িতেই পালন করা হয়। অষ্টমী পর্যন্ত বাড়িতে কোনও রকম আমিষ খাবারের প্রবেশ নিষেধ। শুধু তাই নয়, ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত ছুরি, কাটারি বা বটি দিয়ে কোনও রকম তরকারি বা কোনও কিছু কাটা হয় না। রান্নাও তেমন ভাবেই করা হয়।
সপ্তমীতেই সিঁদুর খেলা হয় কেন? উত্তরে এলাকার প্রবীণ নাগরিকরা জানান, এটা দীর্ঘ দিনের রীতি। গোটা দুবরাজপুরেই এই প্রথা চালু রয়েছে। এখানে একটা সময় আলাদা করে মূর্তি গড়ে দেবীর পূজা করার চল ছিল না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পটের বা সাজে গড়া দেবীর সামনে মঙ্গলঘট স্থাপন করে পূজো করা হত। ফলে বিসর্জন আলাদা করে কোথাও তেমন একটা হত না। বরণ করারও সুযোগ ছিল না। তাই মহিলারা আগে ভাগেই সেরে রাখতেন সিঁদুর খেলার উপাচার।