উদ্বোধনের পর বৃহস্পতিবার সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে ঢাকা মেট্রো। দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রথম দিনেই মেট্রোতে চড়তে পেরে উচ্ছ্বসিত জনতা। ভোর থেকেই মেট্রোরেলে চড়তে স্টেশনগুলোতে দেখা গেছে অপেক্ষার লম্বা ভিড়। তবে সবাই যে শুধু অফিসে যাওয়া আর প্রয়োজনেই মেট্রোতে চাপছেন তা নয়, বেশিরভাগই এসেছেন প্রথমবারের মত বিদ্যুৎচালিত এই ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতে। মেট্রেরেল চড়ার দীর্ঘ সারিতে কেবল যে বড়দের দেখা গেছে তা নয়, বাবা মায়ের হাত ধরে এসেছে শিশুরাও। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় তরুণদেরই।
বৃহস্পতিবার সকালে মেট্রোরেলে উঠতে আগ্রহী মানুষের লাইন ছাড়িয়েছে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সীমাও। আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনের মূল ফটক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইনে অপেক্ষমান ছিলেন শত শত মানুষ। বৃহস্পতিবার সীমিত পরিসরে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল চালু রাখা হয়। তবে ভোর থেকেই প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশনে জনসাধারণ ভিড় জমানো শুরু করেন। পরে সাড়ে ৮টার দিকে মেট্রোর গেট খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। ধাপে ধাপে প্রবেশ করানো হয় অপেক্ষমান যাত্রীদের। প্রথমদিনের এই যাত্রায় শামিল হতে পেরে অনেকেই যেমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তেমনই মেট্রোরেলের স্টেশনের ওপরে উঠতে না পেরে নীচ থেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যান অনেক মানুষ। তবে সব মিলিয়ে মেট্রোরেলের প্রথমদিনের যাত্রাকে সফল বলছেন মেট্রোরেলে ভ্রমণ করা যাত্রীরা।
ঢাকা মেট্রোরেলে গতানুগতিক ও স্বয়ংক্রিয় দুই পদ্ধতিতে টিকিট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সফটওয়ার আপডেট সংক্রান্ত কারণে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টিকিট কাটা যাচ্ছিল না বলে জানান উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবিকরা। তাই গতানুগতিকভাবে হাতে হাতেই টিকিট কাটছিলেন যাত্রীরা। একসঙ্গে অনেক যাত্রীর টিকিট কাটতে গিয়ে কিছুটা দেরি হচ্ছিল বলে জানান টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের অনেকে। তবে টিকিট অর্থাৎ এমআরটি পাস কার্ডটি পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন সবাই। টিকিট কাটা থেকে শুরু করে রেলের বগিতে প্রবেশ করানো পর্যন্ত প্রত্যেক ধাপেই সবকিছু বুঝিয়ে দিতে সহয়তা করছিলেন আনসার বাহিনীর সদস্যরাসহ মেট্রো কর্তৃপক্ষের লোকজন।
যানজটে অতিষ্ঠ রাজধানী ঢাকাতে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশে ছুটছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক ট্রেন। পৌনে ১২ কিলোমিটার উড়াল-রেলপথে মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে উত্তরা থেকে আগারগাঁও চলে আসছেন মানুষ। তবে প্রথমদিন মেট্রোরেল চলল সীমিত পরিসরে, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। মাঝপথে কোথাও থামবে না। প্রথমদিকে ১০ মিনিট পরপর ট্রেন চলবে।
আগামী ২৬ মার্চ থেকে এই রুটে উত্তরা-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল পুরোদমে চলবে। সেদিন থেকে সব স্টেশনে থেমে যাত্রী তুলবে। পুরোদমে চলাচল শুরু হলে চলবে ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। ট্রেনের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৩০৮ জন হলেও আপাতত ২০০ যাত্রী নিয়ে চলবে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল এবং ২০২৫ সালে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে ৩৮ মিনিট লাগবে। ঘণ্টায় ৬০ হাজার অর্থাৎ দিনে ৫ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করতে পারবেন।
ভাড়া কত?
ঢাকা মেট্রোরেলে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ঠিক হয়েছে ৫ টাকা। মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁওয়ের ভাড়া ৬০ টাকা। কমলাপুর পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস নেই। ভাড়া লাগবে না যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তিন ফুটের কম উচ্চতার শিশুদের। স্মার্ট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন যাত্রীরা। বিনা ভাড়ায় বা অতিরিক্ত ভ্রমণ করলে ১০ গুণ জরিমানা গুনতে হবে। এ ছাড়া ট্রেন ও স্টেশনে ধূমপান, পান খাওয়া নিষেধ। পোষা প্রাণী নিয়ে চড়া যাবে না মেট্রোতে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে নানা সুবিধা। নারী ও শিশুদের জন্য থাকছে বিশেষ সুবিধা।
ঢাকা মেট্রোতে টিকিট কাটবেন যেভাবে
মেট্রোরেলে দুই ধরনের টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের এমআরটি পাস, অন্যটি দিয়ে চড়া যাবে একবার। শুরুতে কেবল মেট্রোরেল স্টেশনের কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট জামানত দিলে মিলবে এমআরটি পাস। আর একবারের যাত্রার জন্য টিকিট মিলবে স্টেশনে থাকা কাউন্টার এবং পাশের স্বয়ংক্রিয় ‘টিকিট মেশিন’ থেকে। যাত্রা শেষে নির্ধারিত মেশিনে টিকিট কার্ডটি ফেরত দিলে তবেই স্টেশন থেকে বের হতে পারবেন যাত্রীরা।
ঢাকা মেট্রোরেলের নির্মাণ খরচ
মেট্রোরেলের প্রথম পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ২০০৫ সালে। রাজধানী ঢাকার জন্য তৈরি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) বলা হয়েছিল মেট্রোরেলের কথা। মেট্রোরেলের মোট ব্যয় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৯ হাজার ৬৭৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বাকি ১৩ হাজার ৭৯৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে খরচ করা হচ্ছে। ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর। পরিশোধ করতে হবে ৩০ বছরের মধ্যে।