বাংলাদেশে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে সোমবার মধ্যরাতে।
ইলিশের প্রধান প্রজনন মরসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সোমবার মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিট থেকেই পুনরায় ইলিশ শিকার শুরু হয়েছে সেদেশে।
এদিকে ইলিশ শিকারে নিশেধাজ্ঞা উঠতেই জিভে জল আনা পদ্মার ইলিশ রফতানির মেয়াদ বাড়িয়ে দয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী হাসান মামুদ পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজেই সেকথা বলেছেন।
ফলে দীপাবলির আগেই বাংলাদেশ থেকে এপারে এল ইলিশ। বেনাপোল–পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আরও ১৮ টন ইলিশ রফতানি হয়েছে ভারতে। বাংলাদেশি ৪টি ট্রাকে করে ১৮ টন ইলিশের চালান এসে পৌঁছয় বেনাপোল বন্দরে। কাস্টমস ও বেনাপোল মৎস্য অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা মাছের নমুনা পরীক্ষা করে রফতানির অনুমতি দেন।
এর আগে দুর্গাপুজো উপলক্ষে ইলিশ রফতানি হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে ইলিশ শিকার বন্ধ থাকায় তা পাঠানো যায়নি। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে ইলিশের অবশিষ্ট চালানগুলো বেনাপোল বন্দর দিয়ে রফতানি শুরু হয়েছে। প্রতিটি ইলিশের ওজন এক থেকে দেড় কেজি।
কথা ছিল ঢাকা ৪৬০০ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠাবে। কিন্তু এসেছিল ১০৮৫ মেট্রিক টন ইলিশ। ইলিশের প্রজনন মরশুম বলে ২২ দিন ইলিশ ধরাও বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশে। তখন থেকেই সুখবরের অপেক্ষায় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গবাসী। মঙ্গলবারই ঢাকার সচিবালয় জানিয়ে দেয়, আবার কিছুটা ইলিশ পাঠানো সম্ভব। ইলিশের প্রধান প্রজনন মরসুম ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে ইলিশ মাছ ধরা, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়–বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানগুলি অনুমোদনকৃত ইলিশ রফতানি করতে পারেনি। তাই অনুমোদিত অবশিষ্ট ৩ হাজার ৪৯১ টন ৭২০ কেজি ইলিশ এবার পাঠানো হবে।
সামনেই দীপাবলি। রয়েছে ভাইফোঁটা। তার আগে এপার বাংলায় এসে যাচ্ছে টন টন ইলিশ।
এদিকে বাংলাদেশের চাঁদপুরের উত্তর উপজেলা থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকায় চলতি মৌরসুমে পৌনে ছয় লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। প্রজনন মরসুমে ওই এলাকায় ৫১ শতাংশের বেশি মা ইলিশ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ার সুযোগ পাওয়ায় এ সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন গবেষকেরা।
চলতি অক্টোবরের প্রথম দিকে অমাবস্যার সময় মা ইলিশের প্রজনন কিছুটা কম হলেও পূর্ণিমার সময় ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ নিরাপদ প্রজনন সম্পন্ন করে। ডিম ছাড়া মা ইলিশের সংখ্যা এবার গতবারের চেয়ে বেশি বলেই ধারণা করছেন বাংলাদেশের মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান দাবি করেছেন, গত বছর চাঁদপুরের মেঘনায় যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদিত হয়, এবার ওই পরিমাণ ও সংখ্যা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার জেলায় পৌনে ছয় লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়লে এপার বাংলাতেও ইলিশের রফতানি বাড়বে বলেই আশা গঙ্গাপারের ভোজন রসিক বাঙালিদের। যদিও আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ভারতে এই ইলিশ রফতানি চলবে বলেই স্পষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক।