করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় গত ১ মে থেকে গোটা ভারতে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এতদিন এই বয়স সীমা ছিল ৪০ বছর।
৪০ বছর বয়স হলেই করোনার টিকার জন্য নাম রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। গত ফেব্রুয়ারিতে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আগে ৫৫ বছর বয়সীদের টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল সেদেশে।
করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণকারীদের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। সোমবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরে অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এ কথা বলেন।
এরপরেই করোনা ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশনের বয়স ৫ বছর কমিয়ে দিয়েছে সরকার। এর আগে ভ্যাকসিন গ্রহীতার বয়স সর্বনিম্ন ৪০ বছর থাকলেও এখন সেটা ৫ বছর কমিয়ে ৩৫ বছর করা হয়েছে। ৩৫ বছর থেকেই টিকার নিবন্ধন তথা রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন থেকে বছর ৩৫ হলেই করোনার ভ্যাকসিনের জন্যে নিবন্ধন করা যাবে। এ বিষয়ে দু’ এক দিনের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। আগামি বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই থেকে অনলাইনে সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের জন্য ফের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম আরম্ভ হবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশে বেড়ে চলেছে। হাসিনা সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জিনোম সিকোয়েন্সিং করে জানিয়েছে সেদেশে গত মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৭৮ শতাংশের দেহে ভারতে শনাক্ত হওয়া ‘ডেল্টা’ ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর এর হার বাড়তে শুরু করে।
মে মাসে এ ধরনের ৪৫ শতাংশ এবং জুন মাসে ৭৮ শতাংশ নমুনা শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে আলফা (যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত), বিটা (দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত), ডেল্টা (ভারতে প্রথম শনাক্ত), ইটা (নাইজেরিয়ায় প্রথম শনাক্ত) এবং বি১.১.৬১৮ (অজ্ঞাত) ধরন শনাক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ৭ দিনব্যাপী কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিন আজ মঙ্গলবার (৫ জুলাই)। করোনার সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছেন পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। লকডাউনের শুরু থেকেই বিভিন্ন জায়গায় টহল দিতে দেখা গেছে তাদের। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্টে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
গত পয়লা জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকা-সহ সারা দেশে আবারও করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবারে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে চিনের ওষুধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের টিকা সিনোভ্যাক দেয়া হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের টিকা ফাইজার বায়োএনটেক কোভিড-১৯ টিকাটি দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র ঢাকার কয়েকটি কেন্দ্রে।
দুই মাসেরও বেশি সময় পর দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। জানা যাচ্ছে মডার্নার ২৫ লাখ টিকার চালানও সেদেশে আসতে পারে। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের করোনার টিকা দান নিশ্চিত করতে চায় শেখ হাসিনা সরকার। সেকারণে জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি জ্যানসেন টিকাও কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সূত্রের খবর, জনসন অ্যান্ড জনসনের কাছ থেকে সাত কোটি ডোজ কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রশাসন। এছা়ড়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনের ১০ লাখ ডোজ এ মাসেই আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শতকরা তিন ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। সরকার ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে চায়।