Bengali New Year Celebration Bangladesh:সম্প্রীতির বার্তায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাল ঢাকা। চেনা ঢঙে, বর্ণিল আয়োজনে নতুন বছরটিকে বরণ করে নিয়েছে রাজধানীর নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। রমনার বটমূলে প্রতিবছরের মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের আয়োজনে সংগীত ও আবৃত্তিতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভোর সওয়া ৬টায় আহির ভৈরব সুরে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সবশেষে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে। এতে ছায়ানটের শিল্পীদের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন অন্যান্য শিল্পীও। রবীন্দ্র-নজরুলের গানের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে লোকজ সুরও।
দুই ঘণ্টাব্যাপী এ অনুষ্ঠানে শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকা গানগুলোর মধ্যে ছিল—‘মনমোহন গহন যামিনী’, ‘রাত্রি এসে যেথায় মেশে’, ‘মোরে ডাকি লয়ে যাও’, ‘অন্তরে তুমি আছো চিরদিন’, ‘সংকটের বিহ্বলতা’, ‘আমাদের নানান মতে’, ‘মন মজালে ওরে বাউলা গান’, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’, ‘এমন মানব সমাজ কোনদিন গো সৃজন হবে’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ ইত্যাদি।
এবারের আয়োজনে ছায়ানটের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে তিনি মঞ্চে উঠে সম্প্রীতির বার্তা ও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
বাংলা নতুন বছর উদযাপন শুরু হয় সূর্যোদয় থেকে। তাই শুক্রবার ভোর থেকেই রমনা বটমূলে বৈশাখী সাজে উচ্ছ্বাসী মানুষের আগমন শুরু হয়। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বটমূল প্রাঙ্গণ বর্ণিল-জমজমাট হয়ে ওঠে। সংগীতের বিভিন্ন পরিবেশনা শেষে তাদের মুখর সাড়া যেন প্রাণ সঞ্চার করেছে বর্ষবরণ আয়োজনে।
১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে সূচনা হয় ছায়ানটের। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিস্তার ঘটাতে কাজ করে আসছে। সংগঠনটির উদ্যোগে এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এরপর থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মাঝে ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে পহেলা বৈশাখের আয়োজনটি থমকে ছিল। সেই স্থবিরতা কাটিয়ে গেলো বছর থেকেই ফের সঞ্জীব হয়ে উঠেছে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এ উদযাপন।
এদিকে প্রতিবছরের মতো বর্ণিল সাজে সেজে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০-এর মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবার। শুক্রবার সকাল ৯টায় শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ মোড় ঘুরে আবারও একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পায়। উৎসবপ্রিয় বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা বর্ষবরণের প্রধান অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান থেকে নেওয়া-'বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি।'
সকালে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। শোভাযাত্রায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো ছিলো পুরো এলাকা।
শোভাযাত্রায় এবার স্থান পায় পাঁচটি মোটিফ টেপা পুতুল, ময়ুর, নীল গাই, হাতি ও বাঘ। এছাড়াও শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণকারীদের হাতে ছিলো বিভিন্ন আকৃতির মুখোশ। চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার পর ঢোলের তালে তালে নাচতে শুরু করেন অংশগ্রহণকারীরা। অনেকেই রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা উপভোগ করেন।
শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা বিদেশি নাগরিকদেরও। তারাও সেজেছেন বাঙালি সাজে। মঙ্গল শোভাযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকেই টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে। গত বছরের মতো এবারও তুলনামূলক লোক সমাগম ছিল কম। বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠানে আগত নারীদের পরনে শোভা পায় লাল-সাদা পোশাক, মাথায় নানান রঙ্গের ফুলের টায়রা। তরুণদের পরনে হলুদ- লাল-সাদা পাঞ্জাবি।
শোভাযাত্রা ঘিরে ছিল কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। প্রথমে এলিট ফোর্স র্যাব, সোয়াট টিম, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পুলিশ। এছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের টিমও তৎপর ছিল।
সমস্ত ছবি-সুমন্ত চক্রবর্তী