কখনও গায়ের রং তো কখনও চরিত্র, বারবার ট্রোলিংয়ের স্বীকার হয়েছেন জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেত্রী শ্রুতি দাস (Shruti Das)। এমনকি বাদ যায়নি তাঁর বয়ফ্রেন্ড, পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারকে (Swarnendu Samaddar) নিয়ে আলোচনাও। এই মুহূর্তে 'দেশের মাটি' (Desher Mati) ধারবাহিকের একজন মুখ্য চরিত্র নোয়ার ভূমিকায় অভিনয় করছেন শ্রুতি। আর সেই নিয়েই তাঁকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করে ধারবাহিক থেকে বাদ দেওয়ার দাবী জানালেন এক নেটাগরিক। বারবার এই ট্রোলিং ও বর্ণ বিদ্বেষের স্বীকার হয়ে শেষে আইনি পথে হাঁটলেন অভিনেত্রী। দ্বারস্থ হলেন কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখায় (Kolkata Police Cyber Cell)।
"এই সিরিয়াল থেকে বাদ দেওয়া হোক, ফালতু শরীর বিক্রি করে"! এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু লিখে শ্রুতি দাসকে আক্রমণ করেছেন সুপর্ণা বোস সরকার নামে এক নেটিজেন। সেই স্ক্রিনশট শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হওয়ার পাশাপাশি পুলিশের কাছে জানিয়েছেন তিনি। আজতক বাংলাকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে অকপট শ্রুতি।
শ্রুতি জানালেন, "বারবার ট্রোলিং হচ্ছে বলেই মনে হল এবার এটা থামা দরকার। যদিও জানি এগুলো হয়তো থামবে না, কারণ যারা এগুলো করে তাঁদের শিক্ষার অভাব রয়েছে বলে আমার মনে হয়। এটা এমন একটা বড় অপরাধ, যার শাস্তি কেউ দেয় না। কেন দেয় না, তাও আমি জানিনা। যাকে এগুলোর সম্মুখিন হতে হয়, সেই জানে কেমন অনুভূতি হয় এই সবে।"
তিনি বলেন, "যেই মেয়েটাকে নিয়ে কথা উঠেছিল পরে আমি জানতে আমি সে আমার বাড়ির কাটোয়ার কাছে থাকে। তাঁকে আমি যোগাযোগ করায় সে এবং তাঁর দাদা আমার কাছে ক্ষমা চায়। আমি তাই বিষয়টা এখন একটু ভাবনা চিন্তার মধ্যে রেখেছি। যদিও আমার বাড়ির লোকেরা বারবার বলেছেন, তাঁকে ক্ষমা করে দিতে, যেহেতু সে একটা মেয়ে। কিন্তু যখন এই কাজটা করেছিল, তখন সে কিন্তু একবার ভাবেনি যে আমিও একটা মেয়ে।" তিনি আরও বলেন, "আমি নিজের যোগ্যতায় এবং কঠোর পরিশ্রম করে এই জায়গায় পৌঁছেছি। সেখানে কারও হাত ছিল না, কোনও ব্যাক আপ আমি পাইনি। কাজ করতে করতে আমার স্বর্ণেন্দুর সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে এবং যে ঘটনাচক্রে ১৬ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে থাকা একজন দক্ষ মানুষ। কিন্তু তাই বলেই আমি যে কাজ পেয়েছি, সেটা কিন্তু একদমই নয়। তাই এই বিষয় এই সমস্ত মূর্খদের কোনও কথাই বলতে চাই না।"
সম্প্রতি 'দেশের মাটি' ধারাবাহিক নিয়েও অনেক কটাক্ষের মুখোমুখি হতে হয়েছে শ্রুতিকে। 'মাম্পি' অর্থাৎ যেটিতে অভিনয় করছেন রুকমা রায়, সেই চরিত্রটিকে প্রধান রেখে নোয়া অর্থাৎ শ্রুতির চরিত্র সরিয়ে দেওয়ার দাবী করেন অনেক নেটিজেন। এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বললেন, "যারা সিরিয়াল দেখেন প্রতিদিন, তাঁরা গল্পে এতটাই ঢুকে যান যে তাঁরা ভুলে যান রিল লাইফের বাইরেও আমাদের একটা রিয়েল লাইফ আছে। এটা নিয়ে আমার আর রুকমার মধ্যে কথাও হয়েছে। আমরা ঠিক করেছি বিষয়গুলি একেবারেই পাত্তা দেব না এবং এগুলোর জন্য আমাদের সম্পর্কে কোনও সমস্যা হবে না।"
শ্রুতির কথায়, "এরকম ধরনের নোংরা কোনও কথা শুনলে খারাপই লাগে। এগুলো নিয়ে আমি চুপ থাকতে পারি না। একজন শ্যামবর্ণা অভিনেত্রী হয়ে যদি অন্য শ্যামবর্ণা অভিনেত্রীদের লড়াইয়ের মুখ হতে পারি, তাহলে সেটা আমার কাছে প্রাপ্তি। আমার পাসে ইন্ডাস্ট্রির কেউ না দাঁড়ালেও আমি তাঁদের লড়াইটাও তুলে ধরতে চাই।"
অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে মহিলা কমিশনের অধ্যক্ষা, তথা লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায় (Leena Gangopadhyay) আজতক বাংলাকে জানালেন, "ট্রোলিং, মিম ততক্ষণ অবধি মেনে নেওয়া যায়, যতক্ষণ অবধি সেটি ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায় না পড়ে। বর্ণ বিদ্বেষ কখনই হওয়া উচিত না। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা মহিলা কমিশনের তরফ থেকে এর জন্য সাইবার শাখায় নিজেরা যোগাযোগ করবো এবং এখানকার যে আইনগুলো এর সঙ্গে যুক্ত আছে, সেই আইনগুলো যাতে প্রয়োগ করা হয়, সে বিষয় আমরা কড়া পদক্ষেপ নেব।"