গত জানুয়ারিতে নন্দীগ্রাম সফরে গিয়ে বলেছিলেন এবার এখান থেকেই ভোটে লড়বেন। সেই কথা রেখেছেন তৃণমূলনেত্রী। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে মমতা কেবল নন্দীগ্রাম থেকেই ভোটে লড়ছেন।
প্রার্থী ঘোষণার পর মঙ্গলবারই নন্দীগ্রামে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে জনসভার মাত্রে হিন্দুত্বের তাস খেলে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।
নন্দীগ্রামে স্বলাভ সুলভ ভঙ্গিতেই পাওয়া গিয়েছে তৃণমূলনেত্রীকে। জনসভা শেষে তিনি এলাকার ৩টি মন্দিরে যান পুজো দিতে। কথা বলেন এলাকার মানুষের সঙ্গেও। শোনের তাঁদের অভাব অভিযোগ।
বড়তলায় তার সভা শেষে মমতা ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হরি মন্দিরে যান। এখানে তিনি প্রথমে পুজো-পাঠ করেন। এর পরে পাশের দুর্গা মন্দিরে গিয়েও পুজো করতে দেখা যায় মমতাকে।
সেখান থেকে খানিক দূরে অবস্থিত জগন্নাথ মন্দিরে গিয়েও প্রার্থনা করেন তৃণমূলনেত্রী।
মঙ্গলবার ন্দীগ্রামের মাজারে গিয়েও চাদর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। এর সাধাণ মানুষের ভিড়ে মিশে যান। বাচ্চাদের বড়াবড়ি ভালবাসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামেও দেখা যায় তিনি শিশুদের আদর করছেন।
মঙ্গলবার হঠাৎ করে এলাকার এক চায়ের দোকানে ঢুকে নিজে হাতে সকলকে চা বানিয়ে তা পরিবেশন করে খাওয়ান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যেন ঠিক হয়ে ওঠেন নন্দীগ্রামের ঘরের মেয়ে।
বুধবার ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন। এদিন সকাল থেকেই একাধিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন তৃণমূলনেত্রী।
মনোনয়ন পেশের আগে এদিন নন্দীগ্রামের হাজার বছরের পুরনো এক শিব মন্দিরে পুজো দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় তাঁর সঙ্গে দেখা যায় তৃণমূলের আরও এক নেত্রী দোলা সেনকে। মন্দিরে গিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে আরতি করেন মমতা। কথা বলেন পুরোহিতদের সঙ্গে।
এরপর নন্দীগ্রাম থেকে কপ্টারে চেপে হলদিয়ায় আসেন তিনি। তার পর মঞ্জুশ্রী মোড় থেকে ১ কিলোমিটার পদযাত্রা করে মহকুমাশাসকের দফতরে পৌঁছন।
সমস্ত প্রক্রিয়া মেনেই তৃণমূলপ্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘আজ আমি মনোনয়ন জমা দিলাম। আমার প্রস্তাবক চারজন। প্রস্তাবকের তালিকায় শহিদ পরিবারের মেয়ে। শেখ সুফিয়ান আমার নির্বাচনী এজেন্ট। আজ আমি নন্দীগ্রামে ফিরব, কাল কলকাতায় যাব। নিজের নাম ভুললেও নন্দীগ্রাম ভুলব না। আশা করব নন্দীগ্রামের মানুষ খুশি,’ নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর বলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মনোনয়নের সময় তাঁর পাশে দেখা যায় তৃণমূলের অপর শীর্ষ নেতা সুব্রত বক্সীকে।
এদিন নন্দীগ্রামে রাতে থাকার কথা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিবার শিবরাত্রির দিন তৃণমূলের ইস্তেহার প্রকাশ হওয়ার কথা। তবে এদিন বিকেলে নন্দীগ্রামে আরও কিছু জনসংযোগের কর্মসূচি ছিল তাঁর। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘটে ছন্দপতন। পায়ে চোট পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন হলদিয়ায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নন্দীগ্রামে ফিরে আসেন মমতা। সেখানে গাড়ি নিয়ে একাধিক মন্দিরদর্শনে বেরিয়েছিলেন তিনি। সব শেষে রেয়াপাড়ায় যে বাড়ি ভাড়া নিয়ে রয়েছেন, সেখানকার রানিচকের একটি মন্দিরে হরিনাম-সঙ্কীর্তন শুনতে যান। সেখান থেকে বেরনোর সময়ই ভিড়ের মধ্যে থেকে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ খোদ মুখ্যমন্ত্রীর। এরপরেই তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরতে হয় তৃণমূলনেত্রীকে।