Vegetarian Mutton Recipe: চারদিকে আলোর ঝলকানি, আতশবাজির রোশনাই, আর চারিদিকে কালীপুজোর আনন্দে মাতোয়ারা শহর। মা কালীকে ঘিরে পুজোর সাজসজ্জা, ভক্তদের ভিড়, আর তারই সঙ্গে প্রতিটি ঘরে ঘরে চলে বিশেষ ভোগের আয়োজন। কিন্তু জানেন কি, এই কালীপুজোর দিন অনেক বাড়িতেই প্রচলিত আছে এক বিশেষ প্রথা, নিরামিষ পাঁঠার মাংসের ভোগ! শুনে অবাক লাগলেও সত্যি, এই মাংস সম্পূর্ণ নিরামিষ উপায়ে, অর্থাৎ পিঁয়াজ-রসুন ছাড়াই এটি রান্না করা হয়।
এই নিরামিষ পাঁঠার মাংসের রান্না কিন্তু একেবারে আলাদা। মশলার গন্ধে ভরপুর এই ঝোল ভোগের পাতে পেলে ভক্তরা বলেন, “এত সাদামাটা অথচ এত স্বাদ!” কালীপুজোর রাতের ভোগে বা পরদিনের প্রসাদে অনেক পরিবারেই এই পদ একেবারে ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে। তাই চলুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে তৈরি হয় এই অনন্য স্বাদের নিরামিষ মাংস।
প্রথমেই কথা ম্যারিনেশনের। মাংস ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর একটি বড় বাটিতে নিন টক দই, সামান্য হলুদ গুঁড়ো, পরিমাণমতো নুন, আর একটু সর্ষের তেল। এই মিশ্রণে মাংস ভালোভাবে মেখে ঢেকে রাখুন আট থেকে দশ ঘণ্টা, বা চাইলে সারারাতও রাখতে পারেন। এতে মাংসের তন্তুগুলো নরম হয়ে যাবে, আর রান্নার সময় গন্ধ হবে অসাধারণ।
রান্না শুরু করার সময় প্রথমেই কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করুন। তেল যখন ধোঁয়া উঠতে শুরু করবে, তখন তাতে দিন এক বা দুইটি তেজপাতা। এই ফোড়ন থেকেই রান্নার গন্ধ ছড়াতে শুরু করবে। এরপর ম্যারিনেট করা মাংস তেলে দিয়ে মাঝারি আঁচে কষাতে থাকুন। মাংসের নিজস্ব জল বেরিয়ে শুকিয়ে এলে বুঝবেন, কষানোটা ঠিকঠাক হয়েছে।
এরপর যোগ করুন আদা বাটা, জিরে গুঁড়ো বা জিরে বাটা, আর ধনে গুঁড়ো। যাঁরা ঝাল পছন্দ করেন, তাঁরা সামান্য লঙ্কা বাটাও মিশিয়ে নিতে পারেন। ধীরে ধীরে মশলাগুলি তেল ছেড়ে দিলে তার সঙ্গে মিশিয়ে দিন গরম মশলা গুঁড়ো। এই পর্যায়ে রান্নার গন্ধে ভরে উঠবে ঘর।
এবার যোগ করুন গরম জল এবং পরিমাণমতো নুন। চাইলে আগে হালকা ভেজে রাখা আলুও এই পর্যায়ে দিতে পারেন। আলু দিলে পদটি আরও ভারী ও পরিপূর্ণ হবে। সব উপকরণ একসঙ্গে কড়াইয়ে মিশিয়ে দিন, এরপর ঢেকে দিন এবং মাঝারি আঁচে সিদ্ধ হতে দিন।
যতক্ষণ না মাংস ও আলু দুটোই ভালোভাবে নরম হয়ে যায়, ততক্ষণ আঁচ কমিয়ে রাখুন। সময়ে সময়ে ঢাকনা খুলে নেড়ে দেখে নিন যাতে নিচে না ধরে যায়। ধীরে ধীরে ঝোল ঘন হয়ে এলে বুঝবেন, পদটি একেবারে তৈরি।
শেষে উপর থেকে আবার একটু গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিন। চাইলে সামান্য ঘি-ও মেশাতে পারেন স্বাদের জন্য। গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন এই নিরামিষ খাসির মাংস, কালীপুজোর রাতটা আরও পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এই পদটি শুধু স্বাদেই নয়, বিশ্বাসেও বিশেষ। অনেক বাড়িতেই বলা হয়, কালীপুজোর রাতে মায়ের ভোগে যদি এই নিরামিষ মাংস দেওয়া হয়, তাহলে ঘরে সমৃদ্ধি আসে, দুর্ভাগ্য দূর হয়, আর পরিবারে শান্তি বজায় থাকে।
তাই এবারের কালীপুজোয়, আতশবাজির আলো আর ধূপের গন্ধের মাঝে, আপনার ঘরেও ফুটে উঠুক সেই ঐতিহ্যের স্বাদ, নিরামিষ খাসির মাংসের ঝোলের সুবাসে। মা কালী যেন আশীর্বাদ করেন সকলকে শক্তি, সাহস আর মঙ্গল দিয়ে।