কেসটা শুনলে অবাক হবেন। এক ব্যক্তি ২০১৮ সালে এক সরকারি বিমা সংস্থার কাছ থেকে ১ কোটি টাকার স্বাস্থ্যবিমা করান। প্রতিবার বছর ৬৯,০০০ টাকা প্রিমিয়াম দেন। কিন্তু ২০২৩ সালে যখন তাঁর ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন ইনস্যুরেন্স কোম্পানি তাঁর ক্লেম খারিজ করে দেয়। কারণ? তিনি ধূমপায়ী ছিলেন।
এই ঘটনা সামনে এসেছে ইনস্যুরেন্স পরামর্শদাতা নিখিল ঝা-র X পোস্টে, যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে। কেসটি শুধু একটা ব্যক্তিগত যন্ত্রণা নয়, বরং ভারতীয় বিমা দুনিয়ায় সাধারণ মানুষের অধিকারের এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে বছর পঁচিশের পুরনো ধূমপান করার অভ্যাসের এক ব্যক্তি রক্ত ওঠা ও বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। টেস্ট করে জানা যায়, ফুসফুসে ক্যান্সার। সঙ্গে সঙ্গে পরিবার ক্যাশলেস ক্লেমের জন্য আবেদন করে। কিন্তু বিমা সংস্থা তা বাতিল করে দেয়। সংস্থার জানায়, এই ক্যানসার ধূমপান ও মদ্যপানের জন্য হয়েছে, এবং বিমার নীতির ৪.৮ ধারা অনুযায়ী এটি 'ইনটক্সিকেন্ট' জনিত রোগ, যা চিরকালীনভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ চিকিৎসার রিপোর্টে 'অ্যালকোহল'জনিত কোনও রোগ ধরা পড়েনি।
কনজিউমার কোর্ট সোজাসুজি বলে দেয়, ধূমপান করলেই ক্যান্সার হবে, এমন সরাসরি প্রমাণ কোথায়? কোর্ট জানায়, নিকোটিন কোনও 'প্রমাণিত' ইনটক্সিকেন্ট নয়। শুধু অভ্যাসের কথা বলে রোগের দায় চাপানো যায় না। বিমা সংস্থা কোনও মেডিক্যাল প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে, ওই রোগ একমাত্র ধূমপানজনিত।
ফলে কোর্ট নির্দেশ দেয়, পুরো ক্লেমের টাকা (৯.৪ লক্ষ) ৮ শতাংশ সুদে ১০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। বিমা সংস্থাকে ৫০,০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে, কারণ তারা "deficiency in service" করেছে
১. ধূমপান বা অন্য অভ্যাস থাকলেই বিমা পাবেন না—এটা ভুল ধারণা। বরং আপনি যদি নিজের জীবনযাত্রা সম্পর্কে স্বচ্ছভাবে তথ্য দেন, সেটাই আদালতের চোখে ভাল দৃষ্টান্ত।
২. ক্লেম বাতিল করলেই হাল ছাড়বেন না-- অনেক সময় সংস্থা নিজের ভুল সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। সেক্ষেত্রে কনজ়িউমার কোর্ট বা বিমা ওম্বাডসমানের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন।
৩. ‘ফাইন প্রিন্ট’ পড়ুন: বিমার শর্তাবলি (terms and conditions) পড়ে দেখুন—কোন কোন রোগ বা পরিস্থিতি বাদ পড়েছে বা বাদ পড়তে পারে।
৪. ধোঁয়া তুলে দায় চাপানো যাবে না। প্রমাণ দিতে হবে। কোনও ক্লেম বাতিল করতে গেলে বিমা সংস্থার প্রমাণ দিতে হবে যে, নির্দিষ্ট অভ্যাস সরাসরি রোগের কারণ।
এই কেসটা শুধুই ধূমপানের ওপর নয়। এটা স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা আর দায়িত্বশীল বিমা ব্যবস্থার প্রশ্ন। রোগ হলেই বিমা কোম্পানি দায় ঝেড়ে ফেলতে পারবে না—এই বার্তা কনজিউমার কোর্ট স্পষ্টভাবে দিয়েছে।
তাই আপনি ধূমপায়ী হোন বা না হোন, আপনার জীবনযাপন বা অভ্যাসগুলি বিমা সংস্থাকে জানানো গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি কোনও রোগে পড়েন, সেটা কী অভ্যাসজনিত, তা প্রমাণ দেওয়ার দায়িত্ব বিমা সংস্থার—আপনার নয়।