প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষের যৌনাকাঙ্ক্ষা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে এত ভেজাল খাবার এবং অলসতা ও বদভ্যাস আমাদেরকে ঘিরে আছে, যার ফলে যৌনক্ষমতা কমে যেতে থাকা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। একসময় ৫০-৬০ বছরেও পুরুষের যৌনক্ষমতা অটুট থাকতো, কিন্তু এখন বয়স ৩০ এর উপরে গেলেই সবাই যৌনাকাঙ্ক্ষা এবং শক্তি হারাতে শুরু করে। এর জন্য পুরুষরা নিজেরাও কিছুটা দায়ী বলছে গবেষণা।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ পুরুষই তাদের শারীরিক সমস্যা উপক্ষো করেন। তারা চিকিত্সকের কাছে সহজে যেতে চান না। ফলে দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এমন অনেক অসুখ আছে, যা শুরুতে প্রকাশ পায় না। দীর্ঘদিন শরীরে বাসা বেঁধে গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গের ক্ষতি করে। পরবর্তীতে তা আর সারানোর উপায় থাকে না। তাই বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখলে পুরুষদের সতর্ক হওয়া জরুরি। এসব লক্ষণ অবহেলা করলেই বিপদ বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে আপনার যৌন জীবনেও।
প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া বা রং পরিবর্তন
প্রস্রাবের রংয়ের উপরও কিন্তু নির্ভর করে শরীরের সুস্থতা। একইসঙ্গে প্রস্রাবের বেগ, কতবার বাথরুমে যাচ্ছেন এমনকি প্রস্রাব করার সময় কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না তার উপরও কিন্তু সুস্থতা নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, প্রস্রাবে রক্ত দেখা দেওয়া সাধারণ কোনো সমস্যা নয়, বরং তা মারাত্মক সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যানসার বা কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে এমনটি দেখা দিতে পারে। পুরুষের প্রস্রাবের সমস্যা হতে পারে মূত্রাশয়ের সংক্রমণ, মূত্রনালীর সংক্রমণ, ডায়াবেটিসের লক্ষণ, কিডনি বা হার্টের সমস্যা।
বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট
বুকে ব্যথা করলে সবাই ঘাবড়ে যান। অনেকেই আবার মনে করেন গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা। তবে প্রায়ই বুকে ব্যথা অনুভব করা সাধারণ বিষয় নয়। নিয়মিত বুকে ব্যথা ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা অনুভব করা হৃদরোগের কারণ হতে পারে। অতএব যে কোনো অস্বাভাবিক বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, প্রচুর ঘাম বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যা থাকলে পুরুষরা সাবধান থাকুন ও দ্রুত পরীক্ষা করান। পাশাপাশি পরিবারে হৃদরোগী থাকলে, জীবনযাত্রার মান অনুন্নত হলে, ধূমপান বা অ্যালকোহলে আসক্ত হলে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
যৌনাঙ্গে অস্বাভাবিক তিল বা ক্ষত
যৌনাঙ্গের কথা বলতেই সবাই অস্বস্তি বোধ করেন! তবে শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অংশ নিয়ে কারও তেমন সচেতনতা নেই। বেশিরভাগ মানুষই প্রজনন স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে উপেক্ষা করেন। পুরুষের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বা অণ্ডকোষের আশেপাশে যদি কোনো ধরনের ক্ষত বা তিল-মোল দেখা দেয় তাহলে সাবধান হওয়া জরুরি। কারণ এটি হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ। সমীক্ষা অনুসারে, টেস্টিকুলার ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। অনেকেই এই বিষয়কে সাধারণভাবে নেয়, ফলে বিপদের ঝুঁকি বাড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় এই ক্যানসার শনাক্ত করা না হলে ক্যানসারে মৃত্যুও হতে পারে।
ইরেকটাইল ডিসফাংশন
ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা যৌন কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, একটি সাধারণ সমস্যা। যা বয়স বাড়তেই পুরুষের মধ্যে দেখা দেয়। কিডনির সমস্যা, স্নায়বিক রোগ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মদ্যপান বা যে কোনো আসক্তি থাকলে ইরেকটাইল ডিসফাংশন হতে পারে। তাই এসব রোগে আক্রান্ত হলে আগে থেকেই সতর্ক থাকুন।
অতিরিক্ত তৃষ্ণা
একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ২-৩ লিটার বা ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি। তারপরও যদি বেশি পানি পিপাসা অনুভব করেন তাহলে তা হতে পারে হাইপারগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ। যা ডায়াবেটিসের ইঙ্গিত দেয়। পরিবারের কারও যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া জরুরি। যদি বারবার তৃষ্ণা অনুভব করেন তাহলে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নিন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখুন। প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে সঠিক জীবনযাত্রার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার বিষয় নিয়ে হেলাফেলা করা উচিত নয়। যদিও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি খারাপ হতে পারে। তবে কম বয়সেই যদি আপনি এ সমস্যায় ভোগেন তাহলে তা হতে পারে মস্তিষ্কের সংক্রমণ। এছাড়াও স্ট্রোক, আলঝেইমার, ডিমেনশিয়া বা মদ্যপানের কারণে স্মৃতিশক্তি কমতে পারে। আবার শরীরে ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি দেখা দিলেও স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। তাই কোনো কিছু মনে করতে কষ্ট হলে কিংবা ভুলে যাওয়ার সমস্যা হলে আগে থেকে সতর্ক হন।
এছাড়া যেসব কারণে পুরুষের যৌনক্ষমতা কমে যাচ্ছে তারমধ্যে রয়েছে ধূমপান ও মদ্যপান। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল পুরুষের লিঙ্গের উত্থানজনিত সমস্যা আছে তাদের বেশীরভাগই ধূমপান বা মদ্যপান করে থাকেন।
যারা ড্রাগ আসক্ত, তাদের বেশীরভাগই ধীরে ধীরে যৌন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এছাড়াও কিছু ঔষধ আছে (ব্যথানাশক, গর্ভরোধী) যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আপনার যৌনক্ষমতা কমিয়ে আনে।
ওজন: ওজন বেশী থাকলে যৌন সঙ্গমের ইচ্ছাও কমে যেতে থাকে। আবার ওজন কম থাকাও ভালো নয়! ওজন স্বাভাবিকের থেকে কম থাকলে সেটাও যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
ব্যায়াম না করা : এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের যৌনক্ষমতা অন্যান্যদের তুলনায় বেশী হয়ে থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়, যা আপনার যৌনাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
বদহজম : বদহজমের কারণেও যৌনশক্তি কমে যায়। কেননা খাদ্য হজম না হওয়ার কারণে রক্ত তৈরী হয় না।
দুর্বল যকৃত : যকৃত দুর্বল হওয়ার কারণে যৌনশক্তি কমে যায়। যকৃতের কাজই হলো রক্ত তৈরী করা। যকৃত দুর্বলের লক্ষণ হলো—মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া। শরীরের রঙ হলদে হলদে হয়ে যাওয়া। সহবাসের সময় উত্তেজনা কমে যাওয়া। এসব যখন দেখা দিবে, তখন বুঝতে হবে যে, তার যকৃত দুর্বল হয়ে গেছে।
মস্তিষ্কের দুর্বলতা : আবার অনেকের মস্তিষ্কের দুর্বলতার কারণেও যৌনশক্তি কমে যায়। যখন যৌনাঙ্গের শিরা দুর্বল হয়ে যায়, সব সময় রোগীর মাথায় ব্যাথা অনুভব করে কিংবা সহবাসের পর পরই অস্থিরতা অনুভব করে এবং চোখে অন্ধকার দেখে। সহবাসের পরই অধিক ক্লান্তি নেমে আসে। তাহলে বুঝতে হবে যে, তার মস্তিঙ্কের দুর্বলতা রয়েছে। যার কারণে তার যৌনশক্তি হ্রাস পেয়েছে।
দুশ্চিন্তা : দুশ্চিন্তা পুরুষদের যৌন জীবনের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দুশ্চিন্তা ধীরে ধীরে পুরুষের শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম নষ্ট করে দিতে থাকে, যার থেকে বাদ যায় না যৌনক্ষমতাও।