বর্ষার মরশুম ঢুকতেই বাঙালির মন ইলিশ ইলিশ করতে থাকে। ইলিশের জন্য জীবন বাজি রাখতেও আমরা প্রস্তুত। এপার বাংলা হোক কিংবা ওপার বাংলা, ইলিশ থাকলে পাতে, আর কোনও কথাই নেই।
তার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। দামও চড়া। সব সময় ভালো ইলিশ মেলে না। তবু আমাদের প্রতিদিন বাজারে বের হলে একবার ইলিশের খোঁজ নেওয়া চাই। ইতিমধ্যেই বর্ষা ঢুকে পড়েছে। বাজারে ঢুকতে শুরু করেছে ইলিশও। ফলে আহ্লাদে আটখানা বাঙালি।
ইলিশ নিয়ে লড়াই অনেক লম্বা, বাংলাদেশের মানুষ মনে করেন ইলিশ তাদেরই প্রাপ্য। পশ্চিমবাংলার মানুষ মনে করেন হোক না পরিমাণে কম, তবুও তারা পিছিয়ে থাকেন কেন? আসলে সেরা মাছের সেরা স্বাদ নিতে কেউই পিছপা হতে চান না। পদ্মার হোক কিংবা মেঘনা অথবা ডায়মন্ড হারবার কিংবা কোলাঘাট, মাগ্যি গন্ডার বাজারে যে কোনও ইলিশ ব্যাগে ঢোকাতে পারলেই হলো।
ইলিশে বিপদ?
কিন্তু জানেন কী দেদার ইলিশ খাওয়া মোটেই ভালো কাজ নয়, শরীরের পক্ষে তা মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। যারা সপ্তাহে দু-তিন দিন ইলিশ দিয়ে এক থালা ভাত সাবড়ে দিচ্ছেন, তাদের সতর্ক করেছে একটি গবেষণা রিপোর্ট। বলা হচ্ছে ইলিশ বেশি খেলে বাসা বাঁধতে পারে ভয়ানক রোগ। নিয়মিত ইলিশভোজীদের তাই সাবধান হতে বলেছে ভারতের একটি গবেষণা। জানা গিয়েছে ইলিশের বেশি খাওয়া ভয়ানক রোগ তৈরি করতে পারে শরীরে।
ফুড সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSI) সতর্কবাণী
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ফুট সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অফ ইন্ডিয়া গত বছর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তাতে বেশি খেলে বিপদজনক বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ১২০ রকমের সামুদ্রিক মাছকে। যাদের বেশি খেলে বিষক্রিয়া সম্ভাবনা প্রবল। এই তালিকায় আরও মাছের সঙ্গে প্রথম দিকেই রয়েছে বাঙালির প্রিয় ইলিশও।
সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার প্রবণতা বাড়তেই বিপত্তি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও এফএসএসআই এর অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে গোটা দেশে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার প্রবণতা গত কয়েক বছর ধরে অনেকটাই বেড়েছে। যা আগে অনেক কম ছিল। সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এই ধরনের কিছু মারছে হিস্টিডিন নামে একটি অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি মাত্রাতিরিক্ত বেশি আছে যা histamin তৈরি করে মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া ঘটায়।
অ্যালার্জি থাকলে ইলিশ নয়
তাই যাদের হাই এলার্জি আছে তারা এ লিস্ট থেকে দূরে থাকুন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা নেটওয়ার্ক ইন্ডিয়া এর (AANI) এর ব্যাখ্যা শ্বাসের সমস্যা, গায়ে গোটা বেড়ানো, নাক দিয়ে জল অবিরল হাঁচি, পেটে খিঁচ ধরা, গায়ে জ্বালা ভাব তৈরি হওয়া, ফোঁড়া বেড়ানোর মতো ঘটনা ঘটে। ওই সামুদ্রিক মাছগুলিতে বেশি হিস্টামিন থাকায় এলার্জি দেখা দেয়।
সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করায় সমস্যা
এফএসএসআই সূত্রে জানা গিয়েছে সমস্যা হচ্ছে জল থেকে মাছটি তুলে তারপর সেটি মহাজনের কাছে আসার পর সেখান থেকে আড়তদার হয়ে বিভিন্ন প্রদেশের বাজারে পৌঁছাচ্ছে। সেখান থেকে ছোট বাজারের খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে যায়। তারপর তা কিনে এনে বাড়িতে নিয়ে এসে রান্না করা হয়। এই দীর্ঘ সময় যে তাপমাত্রায় মাছটি থাকার কথা সেটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকে না তাতে সমস্যা তৈরি হয়।
ইলিশ খান সমঝে
জীববিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে কোন সামুদ্রিক মাছে কমবেশি হেস্টিডিন থাকেই। ডিকার্বোস্কিলেজ নামে একটি উৎসেচকের প্রভাবে হিস্টিডিন থেকে হিস্টামিন তৈরি হয়, সেটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
সামুদ্রিক অনেক অন্য মাছেও এ বিষ থাকলেও যেহেতু এদেশে এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশে ইলিশের জনপ্রিয়তা বেশি, তাই সতর্ক করা হয়েছে। তাই যতই জিভে জল আসুক না কেন সপ্তাহে বড়জোর একদিন ইলিশ খান, তার বেশি নয়, বলছে জীববিজ্ঞানীরা।